আজকের সন্ধ্যেটা অন্যরকম গেলো। অমন না গেলে হয়তো আজ জমে যেতাম একধরণের দম আটকানো যন্ত্রণায়। কাজ থেকে ফিরছি, হঠাৎ হোয়াটস আপে ম্যাসেজ করলো ভাই। ‘নীলা জানিস আশু আর নেই?’ থমকে গেলাম। আমার বন্ধু আশুতোষ। আমাদের আশু। সেই আশু যে কিনা আনন্দ বিলিয়ে দিতে ওস্তাদ ছিলো। যার মধ্যে কষ্ট বলে কিছু আছে কিনা কখনোই জানতাম না। যার চোখ-মুখ জুড়ে হাসি খেলা করতো। ইন্টারমিডিয়েটের সময় পরিচয় আশুর সাথে। আমার মাসতুতো ভাই মুন্নার বন্ধু। ওই মাধ্যমে পরিচয়। আমি-মুন্না-রানা-আশু এই চারজন একই ব্যাচের ছিলাম। মুন্না আর রানা আমার মাসতুতো ভাই। ওদের গল্পে বসতাম, কতো গল্প। যাক ইন্টার পাশ করার পর ভর্তি পরীক্ষা। মুন্না-আশু ওরা ভর্তি হলো বুয়েটে, রানা ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে অনার্সে, আর আমি সিলেট এম.সি কলেজে বাংলা অনার্সে। তবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম শুধু ‘ঘ’ ইউনিটে। প্রচন্ড রাগ-বিদ্বেষ ছিলো বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি, তাই ‘ক’ ইউনিটে পরীক্ষার এপ্লাই করিনি। তো ফরম এনে দিলো এই আশু, জমা দিতে গেলাম আমরা সবাই মিলে। সেদিন ছিলো রিক্সা ধর্মঘট বা এমনই কিছু একটা। আর ফরম জমা দেয়ার শেষ দিনও ছিলো ওই দিন। ভ্যান গাড়ী একটা পাওয়া গেলো। আমি-মুন্না-আশু-বিলু-স্নিগ্ধা এ কয়জন মিলে ফরম জমা দিতে গেলাম। এত্তো মজা হয়েছিলো সেদিন। ঢাকা শহরের পথ সেদিন বুঝেছিলো আমরা কি! মজা হলো সবাই ভর্তি হয়ে গেছে, শুধু আমার জন্য মুন্না আর আশু ফরম জমা দিয়েছিলো। তবে আশু পরীক্ষা দিয়েছিলো শুধু আমার জন্যে। আমায় বললো, ‘তোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাইয়াই ছাড়মু।’ বললাম তুই কেন দিচ্ছিস পরীক্ষা? বললো, ‘তুই যাতে না আটকাস।’ বললাম ওই আমারে কি মনে করিস তুই? গাধা? বলে ‘ধুরো গাধা মনে করমু ক্যান? গাধি মনে করি।’ সাথে সাথেই বললো, ‘মাফ চাই মারিস না, সবাই দেখবো।’ এমনই ছিলো আমাদের আশু। ফরম জমা দিয়ে গেলাম নীরব হোটেলে সবাই মিলে। নীরব হোটেল তো আমাদের এক রকমের কফি হাউসই। যাক তারপর ভর্তি পরীক্ষায় অদ্ভূতভাবে একই রুমে সিট পড়লো আমাদের। কিন্তু বেচারা আশু পড়লো একেবারে পেছনের সিটে। একজন শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করলো, ‘স্যার ফরম পাশাপাশি জমা দিলাম, সিট এইভাবে পড়লো যে?’ ওই শিক্ষক তো চোখ বড়ো করে চেয়ে রইলেন। কনফার্ম ভেবেছিলেন আশু আমার প্রেমিক বুঝি। পরীক্ষা শেষ হবার পর বললাম তুই রে আশু যা একটা লাত্থি খাবি। কি ভাবলেন ওই স্যার? ‘আরে তোর লাইগ্যা গেলাম, তোরেই যদি সাহায্য করতে না পারি তাইলে ক্যামনে হয়?’ বললাম শোন আমি ঠিক চান্স পাবো। লিখে রাখ। এরপর বলে, ‘সে আর কইতে! জানি তুই যে চান্স পাবি।’
তারপর কতো কতো বছর। কতো অদল-বদল হলো জীবনের। মাঝে-মধ্যে স্মৃতির সিন্দুকটা খুলি, একা একা হাসি, ভাবি। কিন্তু আর যোগাযোগ ছিলোনা। মাঝে-মধ্যে দেখা হতো। বুয়েটে ব্যস্ত জীবন। আর আমি সিলেটে। নতূন বন্ধু, নতূন পরিবেশ। মানুষ শুধু সামনেই যায়। আমার লেখালেখি নিয়ে কতো যে মজা করতো। কিন্তু আবার জানতেও চাইতো কি লিখেছি নতূন? সেই আশু এই ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী ফেসবুকে একটা ম্যাসেজ করলো। ওর ম্যাসেজটাই তুলে দিলাম।
Nila……….its asu…………kamon achis……… contact no patha……Asu…Tui sylheti nila to……………na ami vul korlam………..
আমি – ওরে আশু রে বদলাসনি…হুম আমি সিলেটী নীলা…কই থাকিস এখন?
Koi thakmu…………..at bd…………etodin dhanmondi chilam………3 mas agee banasree aisi…….tui kamon achis re nila…………vulte parli…………kamne eee……….mamu vuila gala kamne…….. contact details mail kor or ph dibi………..Tui koisos tai vbr e acc khultasi…. valo achis re nila…Fazil ph dite paros na. Dhaka asli ph dili na…Tui ph o dite parli na. Ph dile airport jaitam. Tui to eto sarthopor chili na. Amar sathe dekha hoile tor r canada jete echcha korbe na….Sob buji gorib re keu posondo kore na. Tui o eta mani na pari na mante…Koi kisu na to. Tui kamon achis re. Miss kore tore munna re eksather sriti…Pore bolbo. Jokhon ph dibi…
ওর এসব কথায় বুঝিনি, অনেক কষ্ট বুকের ভেতরে নিয়ে চলে গেছে। একদিন ফোন দিয়ে বললো, ‘একদিন ফোন দিবি এরপর আমি ফোনই ধরমু না।’ আমার আর ফোন দেয়া হয়নি। অনেক কষ্ট হচ্ছে। মানুষ শোক বেশীদিন নিয়ে চলতে পারেনা। আমিও ভুলে যাবো। কে কতোদিন মনে রাখে! পাগলটা অফিস থেকে ফিরে বাসায় এসে বিছানায় শুয়েছিলো, হয়তো শরীর খারাপ লাগছিলো। কেউ ছিলোনা তো বাসায়। সবাই-ই ফোন দিয়ে যাচ্ছিলো, কে তুলবে ফোন? তাকে তো ভগবান কল করে নিয়ে গেছে। কাঁদতে পারিনা আমি। আমার চোখের জল অনেক দামী। আশু তো জানে সেটা। যা তুই জ্বালা এখন ভগবানকে। তোর জন্যে ভেবেছিস শোক করবো? জানিস আজ শপিং করেছি? অনেক দিন পর কাজ থেকে ফিরে অনেক কিছু কিনেছি, বাইরে খেয়েছি। কি ভেবেছিস বসে বসে কাঁদবো? তোর জন্যে রানা স্ট্যাটাস লিখেছে, আর আমি ব্লগে বসে দুপুরে অনেক মজা করেছি। জীবনটা এমনই রে।
আশু আমায় ক্ষমা করিস, কতো ফোন দেই কতো জায়গায়। তোকে আর ফোনই দেয়া হলোনা। ১৯৯৩ সালে শেষ দেখা আর দেখা হবে এসে নেই আমি তারপর। শোন ভগবানকে দুজনে মিলে বেশ জ্বালাবো, ঠিক আছে? তোর জন্যে কখনো তো কিছু লিখিনি, মরে গেলি দেখ তোকে নিয়েই লিখছি।
চলে যাবি। কি হতো বলে গেলে?
কতো কথা জমে ছিলো,
মনে হতো আছিস তো!
সময় করে অনেক অনেক আড্ডা দেবো।
তুই চলে যাবি আগে জানালে ঠিক ফোন দিতাম।
আমরা সবাই ব্যস্ততার খাঁচায় লাফাচ্ছি বন্দী চিড়িয়ার মতো;
তোর খবর নেয়ার জন্যে কোনোও খবরের খোঁজই করিনি,
সময়ের প্রয়োজন হয়নি তাইতো।
এখন নাম্বার দে যদি সাহস থাকে।
সত্যি করে বলতো তুই আসলেই কি চলে গেছিস?
আর দেখা হবে না? কখনোই না?
ভালোই হলো, এক স্বার্থপর মুখের চোখের সামনে এসে তোকে দাঁড়াতে হবেনা।
আমাকেও আর বলতে হবেনা,
বিশ্বাস কর সময় পাইনি।
জানিস লেখার পর আর কোনো কষ্ট হচ্ছে না? শোক কি প্রকাশে কমে যায়?
**আমার ভাই রানার স্ট্যাটাসটাও দিচ্ছি।———
**গত পরশু আশু চলে গেলো, না ফেরার জগতে। মুন্না আমার পিঠাপিঠি কাজিন, আশু তার বন্ধু+বুয়েট মেট। আশুর সাথে বন্ধুত্ব তারও আগে। বুয়েটে ভর্তির জন্য সারারাত জেগে আশু আর মুন্না ইলেক্টিভ ম্যাথ করতো, আর আমি অবাক হয়ে ওদের দেখতাম– আমার সমবয়সী হয়ে ওরা কেম্নে পায় এতো এনার্জি!! গভীর রাতের আড্ডার প্রাণবন্ত আর স্বপ্নবাজ ছেলে আশু কতটা স্বপ্ন পুরন করে যেতে পারলো! স্বল্পায়ু এ জীবনে কে পারে!! মুন্নার মুখে শোনা- গত পরশু রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরে আশু। তারপর থেকেই অনেকে ফোনে পাচ্ছিলনা ওকে। একা বাসায় নিশ্চুপে হার্ট এটাক করা কোনো নিষ্প্রাণ দেহের ফোন রিসিভ করার ক্ষমতা থাকে? বাস্তবতা কি,জীবন কি- জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে আশু বুঝিয়ে গেলো। বুঝতে পারছি আমাদেরও যে কোনদিন সময় হয়ে যাবে সেই ট্রেনে চড়বার। আশু সেই ট্রেনের লাইনম্যান হয়ে সবুজ সিগনাল দিয়ে গেলো।
তবুও, তবুও, তবুও কেন জানি মানতে পারছি না- একদিন আমার ফোন বাজবে আর আমি ধরতে পারবো না…**
হ্যামিল্টন, কানাডা
৫ আগষ্ট, ২০১৫ ইং।
৩১টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
লেখাটি পড়ে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো নীলাদি।এত কাছের একজন চলে যাওয়াতে আপনার কতটা কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।কিছু বন্ধুকে কখনোই ভোলা যায় না।আপনার বন্ধু তেমন একজন ছিলেন।
আপনার বন্ধুর আত্মা শান্তি পাক -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার কষ্ট আর নেই। আশু যখন ছেড়ে যেতে পেরেছে, আমি কেন ওর জন্যে বসে শোক করবো? তাই ওকেও বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছি।
ঠিক করিনি? 🙂
অরণ্য
“তোর জন্যে ভেবেছিস শোক করবো? জানিস আজ শপিং করেছি? অনেক দিন পর কাজ থেকে ফিরে অনেক কিছু কিনেছি, বাইরে খেয়েছি। কি ভেবেছিস বসে বসে কাঁদবো? তোর জন্যে রানা স্ট্যাটাস লিখেছে, আর আমি ব্লগে বসে দুপুরে অনেক মজা করেছি। জীবনটা এমনই রে।”
চলে যাওয়া আশুর জন্য মন একটু মন খারাপ হলো।
“ভালোই হলো, এক স্বার্থপর মুখের চোখের সামনে এসে তোকে দাঁড়াতে হবেনা।
আমাকেও আর বলতে হবেনা,
বিশ্বাস কর সময় পাইনি।”
সাথে বলতে ইচ্ছে করছে “মানুষ এমনই রে।”
নীলাঞ্জনা নীলা
একটুও মন খারাপ না। ও কি ভেবেছে বসে বসে শোক পালন করবো?
অরণ্য ভাইয়া ওটাকে বেশ করে শাস্তি দিতে হবে।
মোঃ মজিবর রহমান
সবাইকে যেতে হবে ঐ না ফেরার দেশে
যত কস্টই হোক মানতে হবে
তবে সৃতি গেঁথে থাকুক মনের গুহায়।
বন্ধুটি পাক শান্তির পরশ ।
নীলাঞ্জনা নীলা
সময়ের আগে চলে যাবে কেন? গেছে যখন যাক। আমিও কাঁচকলা দেখাচ্ছি আশুকে, বুঝেছেন মজিবর ভাইয়া?
আজিম
ভাল লিখেছেন শৈশবের বন্ধুর স্মৃতি নিয়ে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আশু আমার শৈশবের বন্ধু না। ওর সাথে পরিচয় ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। দীর্ঘ বাইশ বছর পর ফেসবুকে ম্যাসেজ করলো। চলে যাবে তো তাই বদমায়েশটা আমার সাথে যোগাযোগ করলো। কি দরকার ছিলো?
ছাইরাছ হেলাল
ভাষা হারাচ্ছি ক্রমাগত, লেখাটি পড়েছি এখানে দেয়ার সাথে সাথেই।
এ লেখার ‘প্রতি’ লেখা আমার জানা নেই। যোগাযোগহীনতা সত্ত্বেও আপনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
উল্টে পাল্টে দিয়েছে, তাতেই বুঝতে পারছি সুসম্পর্কের নিবিড়তা যা অমোঘ মৃত্যুতেও অম্লান।সময় আমাদের
প্রায় সব কিছুই কেড়ে নেয় নিজ নিয়ম মেনে। এ দুঃখের বোধ ও কেটে যাবে কিন্তু ব্যাথার চিনচিনে ধারা
বহমান থাকবে।
ভাবছি এই সংবাদ মাথায় নিয়ে কালকে অমন লেখা লেখি কী করে করলেন!! পাথরে বুক চেপে!!
অপরাধী লাগছে নিজেকেও, কত কী লিখেছি মজার ছলে কিছুই না জেনে।
এই তো, ….
তাঁর আত্মার সদ্গতি কামনা করছি প্রাণপণে।
নীলাঞ্জনা নীলা
কখনোই অপরাধী ভাববেন না। আপনি জানেন না গতকাল আপনি আর জিসান নানা আমায় কতোটা মানসিক শক্তি দিয়েছেন। আমি কাঁদতে পারিনা, এসবে অস্থির অস্থির লাগে। ঠিক বুঝিনা কি করবো! সেই মুহূর্তে আপনাদের দুজনের সাথে কবিতার ছন্দে ছন্দে আড্ডাটা মনটাকে আশ্বস্ত করেছিলো কিছুটা হলেও। আমি কৃতজ্ঞ আপনি আর জিসান নানার প্রতি। এ জীবনে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি, আপনারাও তার মধ্যে এলেন।
হেলাল ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ। -{@
স্বপ্ন
এমন বন্ধুর চিরবিদায় অত্যন্ত কষ্টের।আপনার বন্ধুর আত্মা শান্তি পাক।
নীলাঞ্জনা নীলা
পাগলটা নিশ্চিত জ্বালাচ্ছে ঈশ্বরকে। 🙂
খেয়ালী মেয়ে
একটা মানুষ যখন অনাকাংঙ্খিত ভাবে মারা যায়, তখন শুধু সে একা মরে না, আরো কিছু মানুষকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে যায়–কিছুদিন আগে নিজের কাকাই কে হারিয়ে এই সত্যটা উপলব্ধি করতে পেরেছি–কোন কিছু থেমে থাকে না সত্যি, তারপরও অনেককিছু আর আগের মতো হাসে না/খেলে না…….মৃত্যু বড় নিষ্ঠুর……….
নীলাঞ্জনা নীলা
পরী আপুনি আমি ঠিক হয়ে গেছি। আচ্ছা আমি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক মানুষ বলো তো! ;?
খেয়ালী মেয়ে
আমি বুঝি নারে আপু, অনেককিছুই আমি বুঝি না 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
পরী আপু আমিও একেবারেই না। 🙁
লীলাবতী
আহা একজন বন্ধু এভাবে চলে গেলেন!এমন মৃত্যুকে মেনে নেয়া কঠিন।আপনার মনের অবস্থাকে বুঝতে পেরেছি দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
না, না ঠিক আছি। কষ্ট কেন হবে? ও যখন যায় তখন যদি ওর কষ্ট না হয় আমি কেন ওর জন্য কষ্ট নিয়ে থাকবো?
শুন্য শুন্যালয়
সাহস থাকলে এবার ফোন নাম্বার দিক। বেশ বলেছেন তো!! অজানা অচেনা আশুর জন্য মনটা একটু খারাপ হলো। চলে যাবার সময় একটা হাত ছুঁয়ে দেবেনা?
খুশি হলাম নীলাপু কে দেখে। বুড়ো আঙ্গুল দেখানোই উচিৎ। চলে যাওয়া মানুষগুলো বড় স্বার্থপর হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর বলেছো আপুনি চলে যাওয়া মানুষগুলো বড়ো স্বার্থপর হয়।
রিমি রুম্মান
একটি লেখা এতো মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ। ভেতরটা ক্রমশ অবশ হয়ে আসছিলো এই ভেবে যে, আপনার কতো কাছের একজন বন্ধু চলে গেল ধরা ছোঁয়ার বাইরের জগতে। আমরা আসলে এমনই। অনেক কাছের মানুষের সাথেও যোগাযোগ রাখা হয়না । ভাবি, আছিই তো! এক পৃথিবীতে, এক আকাশের নিচে ! ভাল থাকুক আপনার বন্ধুটি দুর্লঙ্ঘ্য এক দেয়ালের ওপাড়ে। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
কই কাছের ও? কাছের হলে কি এভাবে চলে যেতো?
অদ্ভূত লাগে, মনেই হয়না এই পৃথিবীতে আশু নেই। কিছু কিছু মানুষ এমন থাকে যাদের অভাব কখনোই নাড়া দেয়না। বরং মনে হয় আরে ও আছেই তো!
আশুটা জানলো না ওকে আজ আপনারা সকলেই চিনে ফেলেছেন। কি খুশী হতো ওকে নিয়ে লিখেছি দেখলে।
আপনার মন্তব্যে কেমন একটা আবেশ আছে। -{@
জিসান শা ইকরাম
এমন বন্ধু কমই থাকে জীবনে।
আশুকে ধরা হবে পরকালে,কেন সে স্বার্থপরের মত চলে গেল।
বন্ধুতা টিকে থাক।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা সে আর বলতে! আর কেউ না চিনুক আমি কি সেটা তুমি ভালো জানো।
মেহেরী তাজ
আপনার কোন কষ্ট হয় নি? সত্যি??
তাইলে থাক আমি আবার কষ্ট পেয়ে কি হবে?
নীলাঞ্জনা নীলা
কষ্ট পুষতে হয়না, থেকেই যায়। আনন্দকে যত্নে রাখতে হয়। বুঝলে গো পিচ্চি আপু?
-{@
তানজির খান
বেঁচে থাকুক মনে
অনন্ত কাল ধরে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া রে যে যায় তাকে মনে রাখা যায়না, মাঝে-মধ্যে মনে পড়ে।
বেঁচে থাকলেই মনে রাখে মানুষ। তাও যদি সেই মানুষের ভাগ্য ভালো হয়।
ভালো রেখো নিজেকে। -{@
নীতেশ বড়ুয়া
আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার এক কলিগের সাবোর্ডিনেট হয়ে কাজ করার। আমার চাইতে বয়সে ২/৩ বছরের বড় ছিলেন কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে তিনি আর আমি এমনই বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম যে উনার ঘনিষ্ট বন্ধুদের থেকেও আমি ঘনিষ্ট হয়ে গেলাম। টানা দুই বছর কাজ করেও উনার সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়নি একই রুমে দুই ডেস্ক দূরে থেকেও! উনার বিয়েতে বরসঙ্গী বলতে উনার দুলাভাই আর আমি! আমি নিজেও ভেবে পাইনি কতটুকু আপন করে নিয়েছিলেন আমাকে!
এরপর ঢাকা চলে আসি কাজ নিয়ে, ঢাকার স্বার্থপর জীবনযুদ্ধ আমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে আমার অতীতের সাথে। তবুও উনার সাথে ফেসবুকে কিছুটা যোগাযোগ ছিল।
অনেক দিন পর…
হঠাৎ অফিসে বসে স্কাইপি অন করতেই উনার মেসেজ পাই আমি যোগাযোগ রাখি না কেন, কথা বলি না কেন, ভুলে গেলাম নাকি এইসব সহ আরো নানান কথা… খুব করে বলছিলেন চট্টগ্রাম গনীবেকারীর সামনে দাঁড়িয়ে একবার যেন আমি উনাকে আসতে বলি-এক্সাথে চা আর আড্ডা হবে। প্রায় আধা ঘন্তায় স্কাইপিতে এক গাদা কথা চালাচালি হয়েছিল। কথা শেষ করার আগে বলেছিলেন মুঠোফোনে ফোন করি যেন আর কখন করবো। মনে আছে সেদিন ছিলো বৃহস্প্রতিবার। শুক্রবার উনার অফ ডে আর আমার ছিল শনিবার। তাই শুক্রবার কল দিতে বললে আমি বলি যে শনিবার কল দিচ্ছি ‘সাইফু’ ভাইয়া, এইবার ভুলবো না। কথা হবে অনেক্ষণ আর আপনাকে অনেক বেশী মিস করি অফিস শেষে আর অফিসের কাজের চাপে কারণ আপনিই আমাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে অফিসে মেজাজ ঠান্ডা করে ফেলতে হয় আর অফিস শেষে ঘরে ফেরার পথে জমানো সব কথা বলে ফেলে কিভাবে নিশ্চিন্ত হতে হয়! আমি খুব মিস করি আপনাকে। অবশ্যই ফোন ধরে কল দেবো!
শনিবার ঘুম ভাঙ্গে চট্টগ্রামের সেই অফিসের আইটি হেডের ফোনকল পেয়েঃ “আমাদের সাইফু ভাই শুক্রবার রাতে হার্ট এটাক করে নীরবে চলে গিয়েছেন, হস্পিটালে নিতে নিতেই সব শেষ!”
বিয়ে হয়েছিলো ছয় মাস আগে। কাউকেই কোন সুযোগ দেননি, দেননি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হয়ে বাবা মাকে স্নাতনা দিতে, না দিলেন সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে!
আর আমাকে? একটা মাত্র প্রশ্নের উত্তর দিতে না দিয়েঃ ভুলে গেলে?
আমি আজো উনার ফেসবুক প্রোফাইলে ঘুরি, আজো বলিঃ সাইফু ভাই আমি কিন্তু কল দেবো আপনাকে!
অন্য পারে যদি সঙ্গী হওয়ার সুযোগ থাকে তো আমি বরাবরের মতোই আমার সেই আরাধ্য সঙ্গীকে চাইবোঃ সাইফু ভাই আমি আপনার সাথে পথ চলতে চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
এ জীবনে এমন ভুল আর কোনোদিন হবে না। আর না।
সাইফু ভাই ভালো থাকুন ওপারে। -{@
নীতেশ বড়ুয়া
-{@ (3 -{@