আমাদের আর দেখা হয় না:আমরা আর অপেক্ষা করি না কেউ কারো জন্য। এখানে ওখানে – চেনা রাস্তার মোড়ে অথবা সেই পুরোনো চা স্টলে!
বলিনা, আমার জন্য পরিনীতা বইটা নিয়ে আসিস তো: তোর পড়া হলে;
ছুট দেইনা আর ল্যাম্পপোষ্টের আলোর নীচে। জীর্ণ শরীর নিয়ে ছেরে যাওয়া জায়গায়- জায়গা দখল করেছে নতুন ল্যাম্পপোষ্ট।
আমরা সরে গেছি আশ্চর্যরকম দূর থেকে দূরে। চৌমাথার কোনে এখনো চায়ের দোকানে কেটলির পানি টগবগ করে ফুটছে, হাতল ধরে আছে প্রজন্মের উত্তরাধিকার । অশিতীপর রোগে বিদায় নিয়েছে পুরোনো চেনা পরিচিত ঘ্রান, হাসি, আর যাবতীয় উদোম স্মৃতির ঝাঁঝ। আমাদের পায়ের পাতা আর হাতের আঙুল এখন মনে করিয়ে দেয়- ধূসরতার দিন গোণা ।
স্টেডিয়ামের দেয়াল জুড়ে আদি প্রেমের পরিচয় খুঁজেছিলাম গেলো শীতের এক জমকালো বিকেলে।
পলেস্তারা বদলে গেছে ওখানে। দূরপাল্লার কতগুলো দামী গাড়ি আর টংয়ের চায়ের স্টলে মাঝবয়সী শকূন দেখলাম, চোখে তাদের ভাগাড়ের ক্ষুধা! ইট সুরকির রাস্তাটা সিমেন্ট বালুর নতুন পোষাক পরেছে। শকূণ গুলো নখে ধার নিয়েছে তীক্ষ্ণতর।
প্রতিদিন নাকি খুবলে তুলে খাচ্ছে ইঞ্চি ইঞ্চি জমির ফসল।
দূর থেকে দূরে সরে আছি;
আমাদের আর দেখা হয় না এসব কিছুই।
আমরা কিছু পৃষ্ঠার খোঁজে হন্যে হয়ে গালি ওগড়াই যেখানে সেখানে।
লম্বা হতাসার দীর্ঘশ্বাস ভুলে গিয়ে ত্রান বিতরন করি নাম প্রচারে।
খোলসের ভেতরে থেকে ব্যাতিক্রমিক তকমায় দুপুরের ভাতঘুম দিয়ে উঠে নিরাময় কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়াই।
কদাচিৎ,একটা দুটো খোঁজখবর নেবার চেষ্টা করি
-কেমন আছিস তুই?
– এইতো;আছি আর কি!
– তুই?
– পরে দোস্ত! একটু বিজি আছি।
খটাস্ করে যোগাযোগ বন্ধ করে ডুবে যাই সংসারি আতঙ্কে!
আমাদের দেখা হয় না আর…….।
বেড়ে ওঠা কড়া সবুজের মাঝখানে হাতরাতে গিয়েছিলাম পুরোনো আড্ডা। ব্যাবচ্ছেদ হয়ে গেছে ঘাসের বিলিবন্টন!
আমাদের আর দেখা হয় না ! আশ্চর্যরকম দূরে সরে গেছি……
২৪টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনবদ্য প্রকাশ। অপরিসীম ভালো লাগলো।
বন্যা লিপি
ধন্যবাদ জানবেন মন্তব্যে মহী ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমাদের আর দেখা হয় না, কথাও তেমন হয়না সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে, আরো অনেক নানান অজুহাতের ছুতোয়। আড্ডাটা আমিও খুব মিস করছি। খুব ভালো লিখেছেন আপু। শুভ কামনা রইলো
বন্যা লিপি
আমাদের এখন মন পোড়ায় কেবল। কখনো কোনো বন্ধু বলে- চল দেখা করি’ আমরা সময় সুযোগ মতো হতেই পারিনা একত্রিত।এক এক করে করোনা চলে এলো। আবার কবে কে কবে এক হতে পারবো কে জানে?
সেদিন এক ক্লাশমেটকে নক করেছিলাম, রিপ্লাই দিলো–‘পরে দোস্ত’ এই শব্দদুটোই এই লেখার উৎপত্তি।
ভালো থাকবেন ছোটদি।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
সময়ের কাল-স্রোত আর প্রত্যাহিক জীবনের টানাপোড়নে সব কিছু ফিকে/ধূসর।
তবুও জীবনের ফেলে আসা সবুজ-আতিপাতি একটুখানি খুঁড়ে দেখা খুঁড়ে আনা এই তো জীবন, জীবনের খেড়োখাতা ;
বন্যা লিপি
সময়টা এখন খুঁড়ে দেখার। ঘর সামলানোর ফাঁকেও মন পোড়ে ফেলে আসা পথঘাটে।
খুব বেশি ইদানীং চোখের সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ায় সেই পুরোনো চেনা শহর আর শহরের পুরোনো দেয়াল, পথ, পুকুর, সব সব। এখন আর আগের মতো কিছুই নেই।তবুও মন ওদিকেই ঘুরে মরে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
স্মৃতির স্রোতে এসব আর দেখা হয়না।
বর্ষার বাঁধভাঙা পানি!
মাস্তুলে পাল তুলে ভাটিয়ালি গান গাওয়া। রাস্তার মোড়ে ল্যাম্পপোস্ট জ্বালিয়ে গল্পের বই পড়া। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় কাঁচের দেওয়াল বেয়ে বৃষ্টি পড়া।
সকালবেলা চায়ের কাপে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া। ভেজা মস্তিষ্ক নিয়ে বাড়িতে ফেরা।
আজকাল এসব আর হয় না।
.
ভালো লাগলো দিদি লেখাটা।
বন্যা লিপি
আজকাল বর্ষা আসে শাহরিক কায়দায়। ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ নাকে এসে লাগে না। বৃষ্টির ঝমঝমানি আওয়াজ শুনি না কতকাল! তবুও বর্ষা আসে, শরৎ আসে, আবার চলেও যায় সময়ের হাত ধরে।
ধন্যবাদ দাদাভাই
আতকিয়া ফাইরুজ রিসা
জীবনের একটা সময় আসে যখন অতীতের কিছু মানুষের সাথে আর দেখা হয়না। তবু স্মৃতিগুলো হৃদয়ে এঁটে থাকে কঠিন হয়ে।
শুভকামনা রইলো।
বন্যা লিপি
আন্তরিক ধন্যবাদ মন্তব্যে। শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
এই সময়ে নিজের মেয়ের বাড়িও যেতে পারছি না, অজানা এক নতুন রোগের ভয়ে। নাতিন দুটো ফোন করে বলে, “দাদু, তোমাকে অনেকদিন দেখি না। সামনা-সামনি কথা হয় না। আবার আমাদের বাড়িতে কবে আসবে?”
আমি বলি, “আর বুঝি যথাশীঘ্র দেখা হবে না। যত নষ্টের মূল ভাইরাস করোনা।
আপনার লেখা পড়ে আমার মেয়ের বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল।
বন্যা লিপি
আমার মেয়েটাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেইনি। রোজার ঈদের পরে গিয়েছে শাশুড়ির কাছে। এখনো আসেনা। বলেছি, আসা লাগবে না নিরাপদে থাক তবু।
ভালো থাকবেন দাদা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সময়ে অনেককিছুরই পরিবর্তন হয়ে যায়। সুন্দর লেখা। — “বেড়ে ওঠা কড়া সবুজের মাঝখানে হাতরাতে গিয়েছিলাম পুরোনো আড্ডা। ব্যাবচ্ছেদ হয়ে গেছে ঘাসের বিলিবন্টন!
আমাদের আর দেখা হয় না ! আশ্চর্যরকম দূরে সরে গেছি……” …। শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
জি, আমাদের আর দেখা হয় না সহজে। আবার কবে হবে দেখা তাও জানা নেই।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
আমার অনেক বন্ধুর সাথে দেখা হয়না দীর্ঘদিন। কেমন আছে কোথায় আছে জানিনা। অনলাইনেও খুঁজে পাচ্ছিনা। এই লেখাতে যেন আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন।
শততম পোষ্টের জন্য অভিনন্দন আপু। ভালো থাকুন সবসময়।
বন্যা লিপি
কবে কেমন করে একেকটা বন্ধুকে এই অনলাইনে যুক্ত হবার পরেই খুঁজে পেয়েছি! আজ ওরাও খুব ব্যস্ত! থেকেও না থাকার মতো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছা।
জিসান শা ইকরাম
যাপিত জীবনের ব্যস্ততায় আমরা জীবনের সুন্দর রঙ গুলো হারিয়ে ফেলেছি। সোনালী দিনগুলোর সাথে বর্তমান বড়ই বেমানান, বরং বিপরীতমুখি। তারপরেও আমরা মনের অলিগলিতে পুরান দিনগুলো খুঁজি, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে এমন লেখা লেখি।
সোনেলায় প্রকাশিত শততম লেখাটি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। শুভেচ্ছা সেঞ্চুরী পোস্টের জন্য।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
এমন মন্তব্যের কি জবাব দেবো? কান্না চলে এলো চোখে।যাপিত জীবন কতকিছু কেড়ে নিয়ে দিয়েছে কতগুলো শব্দ! যা নিয়ে প্রকাশ করি এমন করে!
অসংখ্য কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা।
ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
শিরিন হক
দেখা হয়না তবুও….
আমাদের দেখা হয়না ঝড়ে পড়া পাতাদের
আমরা ফেলে আসি লাল- নীল- হলদে পাখিদের…….
বন্যা লিপি
আমরা ফেলে আসি পাখিদের পালক
ফেলে আসি কিছু বেড়ে ওঠা বৃক্ষ।
বড় হতে হতে ঝরিয়ে দেয় পুরোনো বয়স্কা পাতাদের…….দেখা হয়না সহসা আমাদের……
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ অনুভূতিতে ছুঁয়ে গেলো কবি লিপি আপু
বন্যা লিপি
অনুভূতির জাগরন থেকেই লেখা লিটন ভাই
আপনার অনুভূতিতে ছুঁয়ে গেলো জেনে লেখা স্বার্থক হলো। ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
আমরা এখন রোবট। তাই সাংসারিক ঝামেলায় শেষ
বন্যা লিপি
এই বলেছেন মনের কথা ফু’আম্মা।
আমরা এখন রোবট।