১৯৭১ এর ২৬ মার্চ ( স্মৃতিতে ৭১ )
গভীর রাতে শহরে মাইকিং স্মৃতি থেকে যেটুকু মনে আছে তার সারমর্ম এমন : পাকিস্থানী সেনাবাহিনী ঢাকায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে , ওরা আক্রমণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আবাসিক হল গুলতে , আক্রমণ করেছে পুলিশ সদর দপ্তরে । আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা বীরের মত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন , বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন ।
২৫ মার্চের সমস্ত দিনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সত্য হয়ে দেখা দিল। ছাত্রলীগের নেতৃত্বস্থানীয় মোবারক , তারা , রতন , মোস্তফা , দেলোয়ার এমন আশংকার কথাই আলাপ করছিলেন সারাদিন। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই থানার মাঠে বিকেল হতে কুচকাওয়াজ , ডামি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছিল । জনতা যার যার ব্যক্তিগত অশ্র নিয়ে সেই প্রশিক্ষনে অংশ নিয়েছে। বন্দুক , বাশের লাঠি , তীর ধনুক , বড় বড় তলোয়ার ইত্যাদি ছিল অস্রের মাঝে। মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ করা হতো। আমরা আমাদের বয়সী বন্ধুরা দল বেধে দেখতে যেতাম প্রশিক্ষন। মাঠের চতুর্দিকে উপচে পরা দর্শক । কিছুক্ষন পরপর জয় বংলা , জয় বাংলা বলে গগন বিদারী শ্লোগান ।
গভীর রাতে এমন মাইকিং শুনে বাসার সবাই জেগে উঠি। আব্বা কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধুকে ওরা মেরে ফেলবেন এই আশংকায় । সার্ট হাতে নিয়ে গায়ে জড়াতে জড়াতে বাসার বাইরে বেড়িয়ে গেলেন। রাস্তায় তখন মানুষের ঢল। সবার হাতে লাঠী , বন্ধুক , অন্যান্য অস্র। চৌরাস্তায় জটলা। চৌরাস্তা থানার নিকট বর্তী হওয়ায় ৬৯ থেকে এটিই পুলিশের সাথে সংঘর্ষের স্পট হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে আন্দোলনের স্পটও। আমাদের বাসার অবস্থান চৌরাস্তা সংলগ্ন ।
আমি উত্তেজনায় সারারাত আর ঘুমাতে পারিনি। যুদ্ধ কি তা বুঝিনি আমি। কিছুক্ষন পরপর রাস্তায় নেমে আসা জনতা শ্লোগান দিচ্ছিল জয় বাংলা – জয় বাংলা , বীর বাংগালী অশ্র ধরো – বাংলাদেশ স্বাধীন করো , তোমার নেতা আমার নেতা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ।
বাসায় জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমিও শ্লোগানে বলছি
জয় বংলা
বাংলাদেশ স্বাধীন করো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ।
স্বাধীনতা দিবস আসলেই অবধারিত ভাবে এসে পরে স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক। এই বিতর্ক জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় কোনদিন হয়নি। জিয়া কোনদিন বলেননি যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কারন এটি একটি মিমাংসিত সত্যি ছিল। তিনি ২৭ মার্চ ১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন , কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে। ঐ একই ঘোষণা জিয়াউর রহমানের একদিন আগে ২৬ মার্চ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল হান্নান।এর আগে বঙ্গবন্ধু পাক সেনারা ঢাকায় আক্রমণের সাথে সাথে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন যা ২৬ মার্চ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ পত্র এবং টিভিতে প্রচারিত হয় ।
২৬ মার্চ ১৯৭১ এ ABC NEWS প্রচারিত TV খবর ।
২৬ মার্চ ১৯৭১ এ CBS NEWS প্রচারিত TV খবর ।
সংশয় বাদি এবং কুচক্রী মহল যারা একটি মিমাংশিত বিষয়কে বিতর্কিত করে জাতিকে বিভক্ত করছে , তাদের প্রতি শুধুই ঘৃণা ।
৭টি মন্তব্য
শিশির কনা
জিসান ভাই , আপনার যতটা মনে আছে লিখে ফেলুন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রসঙ্গে । আপনি তো লেখার কথা বলেছিলেন ।
ভিডিও ২ টি দেখার পরে আর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয় , কে স্বাধীনতার ঘোষক । ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
আসলে সময় পাচ্ছিনা । চেস্টা করছি লিখতে ।
যারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবী করে , তাদেরকে নিউজ ক্লিপ ২ টা দেখানো যেতে পারে।
বনলতা সেন
আমার মনে কোন সন্দেহ নেই কে স্বাধীনতার ঘোষক । নিউজ এর লিংক দুটো দেয়ার জন্য ধন্যবাদ । সংগ্রহে রেখে দিলাম ।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
লীলাবতী
ভিডিও ২টি এই প্রথম দেখলাম । ধন্যবাদ আপনাকে।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকেও ।
নীহারিকা
পড়ে অনেক ভালো লাগলো।