বিশ্রামের দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত হয়ে হাবুডুবু না, একেবারে ডুবেই গিয়েছি। ডাক্তার, বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজনদের রক্ত চোখের উপদেশ- সব কিছু বাদ দিয়ে বিশ্রাম নাও, ঘুমাও আর ঘুমাও। চব্বিশ ঘন্টার চার ঘন্টা ঘুমালে কি হয় একজন মানুষের? সে ঘুম স্যাকারিন ঘুম হলেও হয় না। নিজেও বুঝি ঘুম দরকার আমার, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল।
ব্যাপক আয়োজন করে ঘুম এর চেষ্টা। বিছানায় চিত হয়ে পায়ের আঙ্গুল থেকে শুরু করে পা এর পাতা, মাংশ পেশী, উরু, কোমর, পেট হয়ে মুখ মাথা পর্যন্ত শিথিল করে ঘুমের ভাব আনার চেষ্টা। বেড়ার ওপাশ থেকে একশত ভেড়া একটি একটি করে অন্য পারে নেয়া আরম্ভ- ৯৯, ৯৮, ৯৭ …………… ২৮…..২২, ২১…… ৩ ঘুমিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।
কিন্তু একি! ঘুমের মাঝে এমন স্বপ্ন এলে বিশ্রাম হবে কি করে? শরীর থেকে আমি বের হয়ে দেখি আমি ঘুমিয়ে আছি বেঘোর ঘুম। আর একটা আমি ভেসে ভেসে উড়ে চলে গিয়েছি এক আজব দেশে। তিনটি ঘটনা দেখে তাজ্জব হয়ে গেছি, এ কোন দেশে আসলাম?
* দেশের অর্ধেক মানুষ জিহ্বার উপরে পলিথিন রেখে খাবার খায়! জিহ্বার মাপ মত পলিথিনের একটা খাপ জিহ্বায় লাগিয়ে নেয় খাবারের আগে। অবাক আর ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম একজন কে ‘ ভাইসাব এই যে আপনারা জিহ্বার উপর পলিথিন রেখে ফুচকা, চটপটি, বিরিয়ানি, মিষ্টি খাচ্ছেন এতে কি এসবের স্বাদ ঠিক মত পাচ্ছেন?’ কিছুটা তাচ্ছিল্য নিয়ে তার উত্তর ‘ নতুন নাকি আপনি এদেশে? অভিজ্ঞতা না থাকলে এসব আপনি বুঝতে পারবেন না। এভাবে খেয়ে দেখুন, বুঝলেও বুঝতে পারেন ‘।
ধুর এভাবে খাবার খেতে আমার বয়েই গিয়েছে। আল্লাহ্ জিহ্বা দিয়েছেন কি পলিথিন দিয়ে আটকিয়ে খাবার খাবার জন্য?
* আর এক শহরে গিয়ে তো অবাকের উপরে তাজ্জব হয়ে গেলাম। শহরটি কলা গাছ চাষের জন্য বিখ্যাত। কলাগঞ্জ নাম হয়েছে একারণেই। এক ইঞ্চি জমিও অবশিষ্ট নেই কলা গাছ এর আওতা মুক্ত। যাদের ফ্লাট বাড়ি, তারাও বাড়ির ছাদে কলার চাষ করে। শহরের অর্ধেক মানুষ কলা খায় কলার ছোলা সহ, বাকি অর্ধেক কলার ছোলা ফেলেই খায়।
ছোলা ফেলে খাওয়া তো স্বাভাবিক, তাই তারা আমার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে নেই। যারা ছোলা সহ খায় তাদের কাছে অনেক সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম ‘ ভাই এই যে ছোলা সহ কলা খাচ্ছেন আপনারা, এর রহস্য টা কি?’
রক্ত চোখে এমন চিৎকার দিয়ে আমাকে উত্তর দিলেন ‘ তুই এখানে এলি কিভাবে? পোলাপানের মত প্রশ্ন করো যা ভাগ’। ভয়ে আর রক্ত চোখ দেখেই এমন দৌড় দিলাম যে মুহুর্তের মধ্যে এলাম এক পার্কে।
* যাক পার্কে এসে সবুজের মাঝে বিশ্রাম নেয়া যাবে। এসব উলটাপালটা জিনিস আর আপাতত দেখতে হবে না।
কিন্তু একি? দুইজন এটি কি খেলছে? ক্রিকেট এমন করে খেলে? একটা ষ্ট্যাম্প দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনে দুদিক থেকে বল ছুড়ছে স্ট্যাম্পের দিকে। মাঝে মাঝে স্ট্যাম্পের গায়ে লেগে ওটা পরে যাচ্ছে। একজন এসে আবার ওটা পুতে দিচ্ছে মাটিতে। হঠাৎ একজন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো ‘ আমার বল কই? আমি খেলবো কিভাবে? ‘ সে কি কান্না!
আমি আসলে গুটি সুটি পায়ে ওদের একদম কাছেই চলে এসেছিলাম। বলটি আমার পায়ের কাছে একটু বড় ঘাসের মাঝে লুকিয়ে ছিল। কুড়িয়ে কান্না রত ছেলেটির হাতে দিলাম। বল পেয়ে ছেলেটি যেন বড় এক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হলো। সারা মুখে হাসি। চলে এলাম পার্কে থেকে। খেলুক ওরা মনের আনন্দে।
এমন স্বপ্ন দেখলে আমার বিশ্রাম হবে কিভাবে? ঘুমের মাঝেও যদি টেনশন আসে, কি উপায়ে আমার বিশ্রাম হবে? টেনশন তো আরো বেড়ে গেলো? এমন আজব স্বপ্ন কেন দেখি? এই স্বপ্নের অর্থ কি? আছেন নাকি কোন স্বপ্ন বিশারদ এখানে? থাকলে বুঝিয়ে দিন এই স্বপ্নের অর্থ, প্লিজ লাগে।
২৬টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
প্ররথম
জিসান শা ইকরাম
মেডেল নেন একটা 🙂
শুন্য শুন্যালয়
হুররররররর। আপনিতো ভালোই ঝামেলা করতে শুরু করছেন মেহেদী। এদ্দিন একজন ছিল, এখন দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী :/
জিসান শা ইকরাম
প্রতিদ্বন্দ্বী এখন অনেক, অনেকেই এখন দৌড়ের জন্য প্রস্তুত সিটির জন্য কান খারা করে রাখে। সিটি পাবার সাথে সাথে দৌড় 🙂
মাহমুদ আল মেহেদী
এ্যাবসেন্স কভারেজ
শুন্য শুন্যালয়
এইগুলা স্বপ্ন? :O
ভাইসাব আপনি না ঘুমাইলেই ভালো, ঘুমাইলে আপনি আরো বিপদজনক হয়ে উঠবেন।
সারা শহর কলাগাছ লাগানো শুরু করবেন। :/
এইসব স্বপ্নের মানে খুঁজতে আপনার নিজের খোয়াবনামা বই লেখা ছাড়াতো উপায় দেখতাছিনা।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা, এমন উলটা পালটা স্বপ্ন দেখি আজকাল ঘুমের মধ্যে?
বিশ্রাম নেব কিভাবে এমন হলে? ঘুমও বাদ দেব তাহলে?
খনার বচনে আছে অবশ্য, ৩৬০ ঝার কলা গাছ লাগালে জীবন ধারণ কলাতেই হয়।
ভাবতেছি কলা গাছ লাগানো আরম্ব করব কিনা 😀
খোয়াবনামা আমারই লেখা লাগবে? !!
মাহমুদ আল মেহেদী
পড়ছিলাম অনেক টেনশন নিয়ে। এ সব তো সত্যিই হতে চলেছে জীবন মাঝে! সত্যি ঘটনাগুলো গেল কীভাবে আপনার সপ্নের মাঝে।
জিসান শা ইকরাম
বলেন কি মেহেদী ভাই! এসব স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে? আমি তো কিছুই টের পেলাম না জীবনের।
মাহমুদ আল মেহেদী
যা রটে কিছুটা হলেওতো ঘটে।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা তা ঠিক।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি তো দেখছি দারুন স্বপ্নবাজ হয়ে উঠছেন!!
এমন স্বপ্ন নিয়মিত দেখলে খবর আছে,
আপনি সুলেমানি খাবনামা ট্রাই করতে পারেন!!
জিসান শা ইকরাম
এমন স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুম কেম্নে?
স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করা যায়? থাকলে বুদ্ধি দিয়েন।
নিয়মিত দেখলে খবর তো আছেই,
কিছুটা আশার আলো দেখতাছি, সুলেমানি খাবনামা 🙂
বন্যা লিপি
পেটে খিল ধরে গেছে……. হাসতে হাসতে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা আছে কারো জানা?
জিসান শা ইকরাম
তুমি হাসছো? আর আমি চিন্তায় অস্থির- এমন স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে হানা দিলে আমার বিশ্রাম হবে কিভাবে?
দেখি কোনো স্বপ্নবাজ আছেন নাকি সোনেলায়।
আরজু মুক্তা
আমারও খুব ইচ্ছে আপনার মতো স্বপ্নবাজ হতে!আমি তো একঘুমেই শেষ!স্বপ্ন ধারের কাছেও আসেনা!
জিসান শা ইকরাম
তাহলে তো আপনি খুবই ভাগ্যবান,
যত্তসব উলটা পালটা স্বপ্ন এসে আমাকে ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করে।
নীলাঞ্জনা নীলা
মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা ঢুকাও কেন নানা? ঘুমানোর সময় মাথার চুল গণনা করো। স্বপ্ন তো আসবেই না, ঘুম একেবারে চোখে উঠে বসে চেপে ধরে ঘুম পাড়াবে।
জিসান শা ইকরাম
গত দশ বছর যাবৎ তোর চোখ আমার মাথার চুলের উপর, কোনো না কোনো ভাবে চুলের কথা আনবি ই আনবি।
এমন উলটা পালটা স্বপ্ন দেখলে আমি কি করুম? স্বপ্নদের ট্রাফিক সিগনালের লাল বাতি দেখালে হবে? দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে স্বপ্ন 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
দশ বৎসর হয়ে গেলো নানা!!! 😮
মোঃ মজিবর রহমান
যাক সোনেলায় একজন স্বপ্নবাজ পেলাম। এখন থেওকে স্বপ্নের দেশে স্বপ্ন পাওয়া যাবে এখানে।
আচ্ছা ভাইজান, স্বপ্ন কেমনে আপনারে চিনল!!!
তৌহিদ
ভাইজান, স্বপ্ন দেখবেন ভালো কথা কিন্তু এমন এমন স্বপ্ন দেখলে সেসবের ব্যাখ্যা কার কাছে পাবেন সেটাই ভাবছি। শেষে নিজেই অস্থির হয়ে পড়বেন কিন্তু!
তবে লেখাটিতে যে মেসেজ দিয়েছেন সেটা সবার ফলো করা উচিত। খেতে চাইলে এক হাত লম্বা জিহ্বা বের করে চেটে পুটে খাওয়া উচিত না। আবার কলা খেতে চাইলে ছোলা ছিলেই খাওয়া উচিত। বেশি ভাইটামিনের আশায় যারা ছাল সহ কলা খায় তারা আম ছালা সবই হারায়।
তারচেয়ে নির্মল বিশুদ্ধতা খুঁজে নিয়ে সেখানেই কিঞ্চিত মনোনিবেশ করলে শান্তি আসে মনে।
জীবনের প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, এসব কিছু মেনে নিয়েই এগুতে হয়। আরে আপনি জ্ঞানী, বিচক্ষণ ব্যক্তি। আপনাকে এসব কেন যে বলছি!
ইঞ্জা
এগুলো স্বপ্ন হইলো, এগুলো সবই দুঃস্ব, মাথায় সারাক্ষণ চিন্তা নিয়ে ঘুরলে তো উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখবেন, কিছুদিন সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও বেড়িয়ে আসুন ফ্যামিলি নিয়ে, যেখানে কোন নেটওয়ার্ক থাকবেনা, শুভকামনা ভাইজান।
প্রহেলিকা
আমি থাকতে বিশারদ খুজতে হবে না। এই যে এখুনি বলে দিচ্ছিঃ
প্রথমটা হলো যখন কেউ রসকষহীনভাবে বেঁচে থাকাকে লব্ধ করে নেয়। পলিথিনের উপর খাবার রেখে যার খায় তারা কেবল খুধা নিবারণের জন্য খাচ্ছে স্বাদ শবটি তাদের কাছে অনর্থক। পরামর্শঃ বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে থাকুন, নিজের মন যা চায় তাই করুন। জীবনের সকল স্বাদ আস্বাদন করুন।
দ্বিতীয়টিঃ বর্তমান বাস্তবতা, আপনার কৌতূহলের কারণে যারা ছোলাসহ কলা খাচ্ছে তারা চোখ রাঙাবে। তাদের কিছু বলাও যাবে না, অনেককিছু দেখে শুনে না দেখার ভান করে যেতে হয় আমাদের।
পরামর্শঃ সেসব লোকদের থেকে দূরে থাকুন।
আর তৃতীয়টি তো একদম সোজা, বিশ্বকাপ আসতেছে, কাপ না নিয়া এবার টাইগাররা থামবো না। কেউ আপনার বলের মতো কাপ তুলে দিলেই তারা শান্ত হইব।
বাহ বাহ! সবতো বলেই দিলাম। দেখলেনতো আমি সবই জানি।