ভীষণ প্রিয় বেল্কনি। প্রকৃতির পট পরিবর্তনের সাথে সাথে নিচের আঙিনার রূপ বদলায়। কখনো গোলাপি রঙের ফুলে ছেয়ে থাকে। কখনো কেবলই ঘন সবুজ। আবার কখনো শুভ্র তুষার। ভীষণ শান্ত পরিবেশ। কখনো নিস্তব্দতা ভেঙে মাথার উপর দিয়ে কাছাকাছি দূরত্বে হেলিকপ্টার উড়ে যায়, কিংবা পাশের চায়নিজ পরিবারের পোষা পাখিগুলো গেয়ে উঠে। বিশ্বের রাজধানী খাত এই শহরে এমন একটি পরিবেশ বাস্তবিকই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। রেলিঙের পাশে এসে দাঁড়ালে মন একেবারেই অন্যরকম হয়ে উঠে। চোখের সামনে দুলে উঠে আরেকটি বেল্কনি। আমার বাবার বাড়ির বেল্কনি। কোলাহল মুখর চারিপাশ। প্রতি বিকেলে নিচে রাস্তায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে থাকতো সন্ধ্যা অবধি……
ছেলেটি অন্য বিভাগে পড়ে যদিও, কিন্তু ক্লাস শেষে আমার সায়েন্স বিভাগের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে প্রায়ই। কখনোবা মেয়েদের কমন রুমের অদূরে। সম্ভবত কারো অপেক্ষায়। কিন্তু সেই মানুষটিই যখন রোজ বিকেলে আমার বাড়ির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অনেকটা সময়, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না কিছুই। একদিন কেমন করে যেন নোট নেবার নাম করে আমার বাবার কঠোর চোখের সামনে দিয়ে বাসায় এসে হাজির ! ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, আমি তাঁকে কি নোট দিবো ? বাংলা ? ইংরেজি ? যাক্, এটি একটি অজুহাত ছিল। বাংলায় আমি বরাবরই ভালো। বিধায় নিয়ে গেলো বাংলা নোট ! তিনদিন বাদে ফেরত দিলো। সাথে নোটের ভাঁজে চিরকুট। ভালোবাসি… ভালোবাসি… ভালোবাসি !!
আশ্চর্য এক স্বপ্নময় অনুভূতিতে ছেয়ে থাকলো মন। মনোভাবে নমনীয়তা লক্ষ্য করি। সম্ভবত ওই বয়সের সব বালিকার মনই এমন নমনীয় থাকে। তবে বছর ষোল সতেরো’র বালিকার ভেতরে তীক্ষ্ণ এক মানসিক সচেতনতাবোধের কথা ভাবলে আজ এতগুলো বছর বাদেও ভীষণ অবাক হই ! ভেতরে ভেতরে খোঁজ নেই। কি তাঁর পরিচয়… কি তাঁর পরিবার। জানলাম, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পুত্র। সরকারী বাংলো। বাবার অফিসের গাড়ির যাচ্ছেতাই অপব্যবহার তাঁদের। ২/৪ জন বন্ধু যারা সেই বাড়িটিতে ২/৪ বার যাতায়াতের সুযোগ পেয়েছে, তাঁদের হয়ে জানলাম, পরিবারটি প্রচণ্ড দাম্ভিক। দাপট প্রতাপ নিয়ে থাকা টাইপ। বাড়িতে বন্ধুরা গেলে গৃহকত্রী পারতপক্ষে কথা বলেন না। আপ্যায়ন করেন না। অথচ আমার রক্ষণশীল বাবা-মা’ও বন্ধুরা এলে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করেন। ড্রয়িং রুমে খাবার পাঠিয়ে দেন। নাহ্, এমন পরিবারে গিয়ে আমার মত মধ্যবিত্ত তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হবে__ হতেই পারে না। সেই সময়টাতে বাংলা সিনেমার গল্পগুলো বাস্তব মনে হতে থাকে। একটি উচ্চবিত্ত পরিবার, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েটিকে প্রতিনিয়ত হেয় করে__ এমনসব দৃশ্যগুলো আতঙ্কিত করে তোলে বেশ কিছুদিন……
অতঃপর____নাছোড়বান্দা সহজ সরল নিরপরাধ ছেলেটির পরিবার চাকুরী সুত্রে আমার শহর ছেড়ে যায়। রেখে যায় এক আকাশ কালো মেঘ… পাহাড়সম মায়া…
অনেকদিন বাদে আজ বেল্কনিতে বিশাল এক আকাশের নিচে আমি। কোথাও কি আঁধার ঘনিয়েছে ? কালো মেঘ জমেছে ? জানা নেই। সত্যিই জানা নেই……
১৬টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
মায়া জিনিস টা বড্ড খারাপ।
স্মৃতি কথা ভালো লেগেছে।
জিসান শা ইকরাম
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা বালিকার মন ভালো হয়ে যাক।
প্রকৃতিতে কালো মেঘ আসুক
বালিকার মনে জেগে থাকুক ঝকঝকে নীলাকাশ।
ভালো লেগেছে লেখা।
খেয়ালী মেয়ে
যে বয়সটাতে মানুষ বেশি ভুল করে সে বয়সটাতে আপনার সচেতনতাবোধের কথা জেনে ভালো লাগলো…আর মায়া সেটা বড়ই খারাপ জিনিস, এ মায়া জিনিসটা প্রায়শ মানুষকে নস্টালজিক করে তোলে, নিয়ে যায় অনেক পিছনে, মায়া একবার কারো জন্য জন্ম নিলে সেটা আর ছাড়ানো যায় না….
আশা জাগানিয়া
অদ্ভুত সুন্দর এক ভালোলাগায় মন ভরে গেলো আপু।ধন্যবাদ আপনাকে এমন একটি লেখার জন্য।ছবিটা লেখার সাথে পারফেক্ট ম্যাচ।
রিমি রুম্মান
খারাপ লেগেছে লেখা …. এমনটি বলেন না তো কখনো
রিমি রুম্মান
ভালো থাকুন ভালোবাসায় … মেহেরীন তাজ
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন … মায়া খুব খারাপ জিনিষ.. খেয়ালী মেয়ে
রিমি রুম্মান
অনেক ভালো থাকবেন শুভ কামনা জানবেন … আশা জাগানিয়া
ব্লগার সজীব
লেখার সাথে মিলিয়ে ফটো তোলা? নাকি ফটোর সাথে মিলিয়ে লেখার সৃষ্টি?আপু এত মায়া দিয়ে লেখেন কিভাবে?
লীলাবতী
বালিকার লেখা আর ফটোর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি 🙂
রিমি রুম্মান
লেখার সাথে মিলিয়ে ছবিটি পাওয়া গেলো … মনে হলো , ছবিটি ছাড়া লেখাটি অসম্পূর্ন মনে হলো .. ভালো থাকবেন …
রিমি রুম্মান
আর আমি মুগ্ধ হয়ে আপনার কমেন্ট দেখি … লীলাবতী 🙂
শুন্য শুন্যালয়
কি সুন্দর ফুলগুলো!! আপনার মুখটাও গোলাপী হয়ে গেছে।
কতো টুকরো টুকরো স্মৃতি দিয়ে সাজানো আমাদের জীবন। সব ঘটনার সাথে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর কিছু লিঙ্ক থেকেই যায়। সুন্দর লেখা আপু।
রিমি রুম্মান
আমরা সকলেই টুকরো টুকরো গুলো রোমন্থন করি অবসরে একাকী … শুভকামনা
নুসরাত মৌরিন
আহ্ কিশোরীবেলার সেই অদ্ভুত সময়। কত দারুন ভাবে লিখলেন আপু।
আপনার এই সময়ের বেলকনিটাও তো দারুন।আমারও খুব ইচ্ছে করছে অমন একটি ফুলে ঘেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার প্রিয়তম আকাশ দেখি।
রিমি রুম্মান
নিমন্ত্রণ রইলো আমার বেলকনিতে …