অবাকের স্কুল ভীতি

শাফিন আহমেদ ২৯ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ১০:০২:৫২অপরাহ্ন গল্প ২২ মন্তব্য

অবাকের বয়স আজকে ৬ বছর পূর্ণ হলো । তার বাবা মা বাসায় বসে আলোচনা করছে যে সামনের শনিবার তাকে স্কুলে দেয়া হবে । মনে তার প্রচন্ড ভয় এই স্কুলে যাওয়া নিয়ে , কোনো এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছিলো স্কুলে গেলে স্যারেরা নাকি ধরে মুসলমানি করিয়ে দেয় , সেই থেকেই স্কুলের নাম শুনলে অবাক কান্না করে আর যেতে না চাওয়ার কারন উল্লেখ করে বাবা মার কাছে । বাবা মা তো শুনে শুধু হাঁসতে থাকে  আর বুঝিয়ে বলে যে এগুলো মিথ্যা কথা বাবা তোমার বন্ধু তোমাকে ভয় দেখিয়েছে , তবুও অবাকের বিশ্বাস হয় না বাবা মায়ের কথা , ঘুমের মধ্যেও স্বপ্ন দেখে স্কুলের আব্দুল হাই স্যার ছুড়ি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে । অবশেষে শনিবার আসলো। অবাকের বাবা মা তার জন্য একটা স্কুল ব্যাগ এনেছে খুব সুন্দর দেখতে , ব্যাগের পিছনে একটা বড় ঘড়ি, ঘড়িটিতে ব্যাটারি লাগিয়ে টাইম ঠিক করে দিলো । অবাক খুবই খুশি এরকম ঘড়িওয়ালা একটা ব্যাগ পেয়ে । অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে অবাককে রাজি করানো হলো স্কুলে যাওয়ার জন্য । স্কুলে ঢুকতেই অবাকের ঘড়িওয়ালা ব্যাগের দিকে সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবাক আসলে খুবই ভয় পাচ্ছে এই অচেনা পরিবেশ ।বাবা মা ওকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকলো । এদিকে মুসলমানির আতঙ্কে ঘেমে যাচ্ছে অবাক । স্যার বললো বসো এখানে , একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো । অবাক স্যারের হাতের দিকে আতঙ্ক নিয়ে তাকাচ্ছে কিছুক্ষন পর পর কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা ছুরি জাতীয় তাই একটু স্বস্তি পাচ্ছে মনে মনে । অবাককে স্যার আসলে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে বলে বসিয়েছে । অবাকের কাছে নাম জানতে চাইলো আর পাঁচটা পাখির নাম জানতে চাইলো। অবাক সুন্দর করেই সব বলে দিলো তবে একটু ভয়ে ভয়ে, তারপর তার বাবা মাকে বললো শিশু শ্রেণীতে নিয়ে বসাতে । বাবা মা অবাককে নিয়ে শিশু শ্রেণীতে ঢুকতেই অবাক দেখে মোটা মতো এক স্যার রোল কল করছে ছাত্র-ছাত্রীদের । অবাক খুবই ভয় পেলো এই স্যারকে দেখে । সামনের বেঞ্চগুলো খালি না থাকায় ওর মা পেছনের বেঞ্চে গিয়ে অবাককে বসিয়ে দিয়ে যেই বের হতে নেবে তখনি পেছনে তাকিয়ে দেখে অবাক আঁচল ধরে বসে আছে আর কান্না করছে । অবাক অসহায়ের মতো বলতে লাগলো আমাকে রেখে যেওনা আম্মু তোমার পায়ের ধরি । খুব জোরে শব্দ করে কান্না করায় স্যারের কানে পৌছালো , স্যার এসে দেখে অবাক খুব ভয় পাচ্ছে তাই ওর মাকে বুঝিয়ে বললো, ঠিক আছে আপা আপনি তাহলে ওর পাশে একটু থাকেন । এরকম করে প্রথম দিন গেলো দ্বিতীয় দিন আবার আম্মুর যেতেই হবে অবাকের সাথে না হলে সে যাবেনা । কি আর করা, আবার গেলো আম্মু তার সাথে । স্যার রোল কল করছে, অবাক মুখ থেকে ‘’উপস্থিত’’ বলতেও ভয় পায় , তারপর স্যার বলে ‘’অবাক চৌধুরী’’ তখন অবাক আরো ভয় পায় যে ঐ লোকটা তার নাম জানলো কি করে । বাধ্য হয়ে অবাকের মাকেই বলতে হলো ‘উপস্থিত স্যার’ ক্লাসের সবাই হো হো করে হেঁসে দিলো সাথে স্যার’ও । কিছুক্ষন পরে স্কুলে এলো ভিজিটর, দেখে পিছনের বেঞ্চে ছাত্রছাত্রীদের সাথে একজন মহিলাও বসে আছে । তারা শ্রেণীকক্ষে বসে থাকা শিক্ষককে বলে, স্যার উনিও কি স্টুডেন্ট ? স্যার হেসে বলে- না স্যার উনি অভিভাবক, ছাত্র ভয় পায় তাই পাশে বসে আছে । এরকম করে বেশ কিছুদিন কেটে যায় অবাকের কিন্তু ওর মায়ের পক্ষে তো আর রোজ রোজ কাজ-কর্ম ফেলে রেখে স্কুলে গিয়ে বসে থাকা সম্ভব নয় । কি যে করবে এই ছেলেকে নিয়ে শুধু ভাবতে থাকে , , ,

চলবে, , ,

১জন ১জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ