এগারো.
পল্টন থানার এস আই রফিকুল ইসলামের পেটে সমস্যা। বাথরুমের আউট এন্ড ইং প্যারোড চলছে। স্যার এর এহেন দশা দেখে হাবিলদার দবির মোল্লার খুব মায়া লাগছে।তাকে দু একটা সান্তনা সুচক কিছু বলা দরকার।
স্যার স্যার!
এখনই কি ডাকার সময় হলো। আর সময় পেলে না! এই বলে বাথরুমে ঢুকে গেলেন। খানিকবাদে বের হয়ে বলেন কি বিষয়?
না মানে আপনার অবস্থাতো সুবিধার মনে হইতেছে না।
পেটের মধ্যে আবার মোচর দিয়ে উঠল। উহু বাবা! পেট ধরে মাটিতে বসে পড়লেন।
স্যার স্যার গো। আমার স্যারের কি হইছে গো।চিৎকার শুরু করল সে।
দবির! চিল্লাইয়া ফয়দা নাই। আমার সময় শেষ। আমি মনে হয় আর বাচব না। ও মাগো!
তোবা তোবা কি কয় স্যারে। দাড়ান আমি এখনিই এ্যম্বুলেন্সে খবর দিতাছি।আপনারে হাসপাতালে লইয়া যাইবো।
কিছুতেই কিছু হবে না! সব অভিশাপ!
কিসের অভিশাপ স্যার।
জীবনে কত হারম খেলাম। কত ক্রসফায়ারে নিরিহ মানুষ মারলাম। আজ সেই পাপে ধরছে। ও মাগো! মরে গেলাম! আমি বুঝে গেছি আমার নিস্তার নাই।আমার বাসায় একটু খবর দাও।আমাকে শেষ দেখা যাতে দেখে যায়। বির বির করতে করতে জ্ঞান হারালেন তিনি।
নাবিল তার নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে বেডের রোগিদের অবস্থার খোজ খবর নিচ্ছিল।একটি বেডের সামনে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্য।
বিষয়টা কি দেখার জন্য এগিয়ে গেলেন। তাকে আসতে দেখে একজন বলে উঠল-
ঐ যে ডাক্তার সাব আসছেন।
ডাক্তার সাব আমার স্যারকে একটু দেখেন!
অবশ্য দেখব।কিন্তু এভাবে ওনাকে আপনারা ঘিরে রাখলে দেখব কিভাবে? আপনার একটা কাজ করুন সবাই বাহিরে বারান্দায় অপেক্ষা করুন। আমি নিরিবিলি ওনাকে একটু দেখি।
পুলিশ অফিসারটি একটি হাতে মুখ আরেকটি হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে আছে।আর বির বির করছে। আমি আর বাচব না। পাপে ধরেছে। পাপ !পাপ! আমার ক্ষমা নাই।
দেখুন আমার সবাই কম বেশী পাপি।যে অনুশচনা করে তার জন্য ক্ষমা আছে।
কে? কে? মুখথেকে হাতটি সড়িয়ে নাবিলের দিকে তাকলেন তিনি।
তখনই পুলিশ অফিসারটিকে দেখে চিনতে পারল নাবিল। আরে এত ওনি যার কল্যানে ফারজানার সাথে তার প্রথম পরিচয়।
কি বলছিলেন আপনি?
বলছিলাম পাপ করলেই ক্ষমা নাই কথাটি ঠিক নয়।পুন্যদ্বারা পাপ কাটা যায়। আপনিতো পুন্যও করেছেন।
কে বলল ভাই! আপনি জানেন না! আমি বেতন পাই কত বলেন কিন্তু আমার ঢাকায় তিনটা ফ্ল্যাট।ব্যাংকে আছে আমার আর আমার স্ত্রী পুত্রদের নামে লাখ লাখ টাকা। আপনি জানেন না ভাই! এসব আমি সব করেছি আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমার মত পাপির পুন্য কোথায় ভাই? আল্লা আজ আমাকে জম্মের ধরা ধরছে। আমার রেহাই নাই।
আপনি কি পুন্য করেছেন তার সব হয়তো আমি জানি না। কিন্তু একটি পুন্যতো আপনি অবশ্যই করেছেন। দুটি মনের মিলনের পুন্য। যার স্বাক্ষী আমি!
কি বলছেন ডাক্তার সাহেব।
আমাকে কি আপনি চিনতে পারছেন?
আপিনি কে? আমি আপনাকে চিনি…..
অবশ্যই চিনেন! ভাল করে তাকিয়ে দেখুন। এক বছর আগে ৫ই জানুয়ারী পুরনো ঢাকার একটি ভোট কেন্দ্রে একটি মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমাকে আপনাদের ক্যাম্পে নিয়ে এসেছিলেন।তারপর….
আর বলতে হবে না। আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি! ডাক্তার নাবিল! সেদিনের ঘটনাকি কখনো ভোলা যাবে? আপনি না থাকলে মেয়েটাকে বাসায় পৌছানো যেত না। কিন্তু আপনাদের উপরতো এ্যাটাক হয়েছিল। পিক আপ ভ্যানের ড্রাইভার ভোলা নাথতো পালিয়ে ছিলো। গাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়। এখবর আমরা একটু দেরিতে পেয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আপনারা নেই।এমন সিচয়েশন ছিল যে আপনার ফোন নাম্বারটা পর্যন্ত রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম।এইটুকু বলে ওমাগো! মরে গেলাম মরে গেলাম বলে চিৎকার শুরু করলেন তিনি।
আপনার কিছু হবে না ! আমি দেখছি! সিস্টার সিস্টার এই ইনজাকশনটি নিয়ে আসুন। কুইক! কুইক!
বার.
দরজার বাহিরে হুইল চেয়ারে নববধুর সাজে একটি মেয়ে বসে আছে। তার সামনে আধাপাকা চুল একজন বৃদ্ধ দাড়িয়ে আছে। এই প্রথম তাদের দুজনের দেখা। কিন্তু বৃদ্ধের আচরনে মনে হচ্ছে মেয়েটি তার অনেক দিনের চেনা।
নাবিলের মা ! নাবিলে মা ! দেখ তোমার ছেলে বিয়ে করে বৌ নিয়ে এসেছে।
বাবা! এসব কি বলছ! মাতো ……………….
ও তাইতো এসব আমি কি বলছি। ধুর মাথাটা পুরোপুরি গেছে। আসলে আনন্দে এতটা আপ্লুত হয়ে গেছিযে সব ভুলে গিয়েছি। তা আমার মাকে কতক্ষন বাহিরে দার করিয়ে রাখাবি? নিজের অভিনয় প্রতিভায় নিজেই আচর্য হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নাবিলের মাকে নিয়ে করা অভিনয় অংশটুকু ইচ্ছে করেই তিনি করেছেন। ছেলে ধরতে পারেনি এটা ভেবেই তার মনে একটা অন্যরকম আনন্দ হচ্ছিল। জীবন মানে অভিনয়। যে যতবেশী ভাল অভিনেতা তার সংসার তত সুখের। সংসার সুখের হয় অভিনয়ের গুনে। ছেলের বিয়েতো সত্যিই মেনে নেয়া হয়েছে।হিরার টুকরা ছেলে বাবা ছাড়া কিছুই বুঝেনা।সেই ছেলের সাথে অভিনয় করতে হচ্ছে রিস্ক নেয়া যাবে না।স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ভাব ভালবাসা দেখাতে হবে। নইলে বৃদ্ধাশ্রম!
ছেলের বৌ নিয়ে আসার ঘটনাটা মনে হলে তার মনে অন্যরকম তৃপ্তি হয়। তাকে তার ছেলে আর বৌ পজেটিভ শশুর হিসেবেই নিয়েছে। অবশ্য মেয়েটি সত্যিই ভাল। আপাতত মনে হচ্ছে রিস্ক নেই। আজ ওদের বিবাহ বার্ষিকী । কিছু একটা দিতে হবে দুটোকে ।কি দেয়া যায়। মৌচাক মার্কেটের সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে চিন্তা করছেন তিনি।
ছার আমারে লন।
তোরে লমু মানে?
মানে বাড়িত যাইতে রিস্কা লাগব না।
সবেতো আসলাম । আগে মার্কেট থেকে কেনা কাটা করি।
চিন্তার কিছু নাই ছার। আমনে কাম সাইরা আহেন । আমি এইখানেই আছি।
তোরতো বেটা লস হয়ে যাবে?
তা হইলে হইব! আমনের হেইডা ভাবন লাগত না।টেকা পয়সা হাতের ময়লা।
তুইতো দেখি হাজী মোহাম্মদ মহসীন হয়ে গেছিস।
এই হাজীডা আবার কেডা?
তুই চিনবি না!
আমার চিননেরও ঠেকা নাই অত!
বাহ! ভালইতো চটাং চটাং কথা বলছিস! কি নাম তোর?
আমার নাম হারেছ আলী।
বাহ! ভেরী বিউটিফুল নাম তো!
ছারে যে কি কয়। এইডা ফুলের নাম না । এইডা আমার নাম।
হাতে সময় বেশী নেই। দেশের অবস্থাও সুবিধার না। মার্কেট থেকে কিছু একটা কিনে দ্রুত বাসায় পৌছতে হবে।কি কিনবেন ভাবতে ভাবতে দোকাগুলো চক্কর দিতে লাগলেন।
২টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গল্পটা সুন্দর হয়েছে। শ্বশুরের অভিনয় প্রতিভা দারুন। হারেছের কথা গুলো মজার। ভালো থাকবেন
আতা স্বপন
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।