মাত্র ৭১৯ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এই সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়ার মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ার বাতাম দ্বীপের সাথে সিঙ্গাপুর স্ট্রেইট দ্বারা বিভক্ত একটি বানিজ্য ও পর্যটন নগরী। সারা দুনিয়ার বাঘা বাঘা টাকাওয়ালা মানুষগুলো টাকার পেছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে যখন হাঁফিয়ে উঠে তখন একটু বিশ্রামের আশায় রেসের ঘোড়ার মতো ছুটে আসে এখানে।
আর এখানকার শতকরা ৭৫% চায়নিজ জাতীয়তাবাদী মানুষগুলোও তাদেরকে আদর আপ্যায়ন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতে যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। বিনোদন, ব্যাবসা, মিটিং- কনফারেন্স, ট্রেড ফেয়ার, ওপেন ইকোনমি প্লেজার সবকিছুই এতো সুন্দর আর মনোরম পরিবেশে আয়োজন করা থাকে যেটা না দেখে কল্পনাই করা যায় না।
এছাড়াও এখানকার ক্যাসিনো গুলো দুনিয়ার সমস্ত জুয়াড়ীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের অভয়ারণ্য ধরা হয় এই শহরকে। এখানে আপনি যা চাইবেন সবিই প্রস্তুত থাকে। চাওয়া মাত্রই যেন সার্ভ করা যায়-এ যেনো সিঙ্গাপুরের হোটেল, মোটেল আর গেস্ট হাউস গুলোর মধ্যে একটি ইন্টার কম্পিটিশন। সমস্ত হোটেল আর বার হাউজ গুলো পরিপূর্ণ থাকে বারোমাস। মদ আর নারী এই দুই বস্তু এতোটাই সহজলভ্য যে আপনি অর্ডার করতে যেটুকু সময় লাগে সার্ভ করতে সময় লাগে তার সিকিভাগ।
চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে মারিয়ানা বে স্যান্ডস সতের কিলোমিটারের স্বল্প পরিসরের ড্রাইভ। মিষ্টার জোসেফ ফার্নান্দেজ নিজেই চলে এসেছেন অবন্তিকাকে এয়ারপোর্টে কনগ্রাচুলেট করতে। রেড ওয়াইন কালারের লো-বড়ি টু ডোরস ল্যাম্বরগিনি স্পোর্টস সেডান আগে থেকেই লবিতে দাঁড়ানো ছিলো। অবন্তিকা লাগেজ বেল্ট থেকে তার ছিমছাম গোল্ডেন কালার রিমোয়া ট্রলি টা নিজেই টেনে নিল লবি পর্যন্ত।
অবন্তিকা আগে থেকেই গাড়ির নাম্বার এবং কালার জানতো। কাজেই এক্সিট অতিক্রম করে লবির পাথ-ওয়েতে রাখা সবচেয়ে জমকালো আর দৃষ্টিনন্দন গাড়ির নাম্বার প্লেট টা এক পলক দেখেই যারপর নাই মুগ্ধ। পাশেই একটা স্মোকিং জোনের বেদীতে দাঁড়িয়ে ফর্সা লম্বা যে মানুষটা মনের সুখে সিগারেট টানছে সেই যে মিষ্টার ফার্নান্দেজ এতে অবন্তিকার আর কোন প্রকার সন্দেহ রইলো না।
প্রায় পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি উচ্চতার মাঝারি গড়নের দেহাবয়ব নিয়ে যে আমেরিকান মানুষ টা এখানে দাঁড়িয়ে আছে, প্রথম দেখাতেই যে কোনো বাঙালি মেয়ে তার প্রেমে পড়ে যাবে এতে কোনই সন্দেহ নেই। বেশিরভাগ আমেরিকান শেতাঙ্গই লালচে গড়নের চামড়ায় মোড়ানো পুতুলের মতো হলেও ফার্নান্দেজ কিছুটা ব্যতিক্রম। দুধে আলতা মেশানো ক্রীমি উজ্জ্বল ইউরেশীয় গড়নের। রোলেক্স ব্রান্ডের রিস্টওয়াচের ডায়ালটা যে হীরায় মোড়ানো সূর্যের আলোর প্রতিফলিত রশ্মি চোখে লাগতেই সেটা বোঝা যাচ্ছে।
অবন্তিকা গাড়ির সামনে দাঁড়াতেই সহস্র বছরের তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো ছুটে এলো ফার্নান্দেজ। কাছে এসেই ভাবগম্ভীর বনেদী বাঙালীর মতো হাত বাড়িয়ে ভাঙাচোরা বাংলায় বললো “শুভ অপরাহ্ন” বেঙ্গল কুইন, অবন্তিকা।
অবন্তিকা ফার্নান্দেজ এর কাছ থেকে বাংলায় অভিবাদন আশা করেনি। কতকটা অপ্রতিভ হয়ে অবন্তিকা হাত বাড়িয়ে করমর্দন করে বললো, শুভ অপরাহ্ন- স্যার।
ব্যাক বনেটে লাগেজ পুল ইন করে ফার্নান্দেজ ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো। অবন্তিকা পাশের সিটে উঠে বসতেই ফার্নান্দেজ সুইচ টিপে মাথার উপর থেকে গাড়ির টপার ওপেন করে দিলো। পাথওয়ে থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্ট ডাইভ-ইন ধরে গাড়ি পৌঁছে গেলো ইস্ট কোস্ট পার্ক ড্রাইভে। এই ইসিপি-এক্সপ্রেস ওয়েটা সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার হয়ে স্যান্ডস বে’তে গিয়ে মিশেছে।
শেষ বিকেলের হাল্কা রোদে চ্যানেল বেয়ে ধেয়ে আসা তুমুল ঠান্ডা বাতাস ভেদ করে ছুটে চলছে ল্যাম্বরগিনি স্পোর্টস সেডান। গাড়ি ছুটে চলছে যেখানে অবন্তিকার স্বপ্নের সোনার কাঠি প্রতীক্ষমান সেই অনিশ্চিত সাফল্যের গন্তব্যে। অবন্তিকা এখনো জানে না হোটেল মারিয়ানা বে’তে কি মিরাকল অপেক্ষা করছে তার জন্য।
© অনন্য অর্ণব
উত্তরা, ঢাকা
২১/১০/২০১৯
১৮টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভিন
আগেও পড়েছি আবার পড়লাম,,,,দুর্দান্ত লেখার হাত আপনার ।যেমন গল্প তেমনি কবিতায়।পরের পর্বের অপেক্ষা,,,,,
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় ❤️
মাছুম হাবিবী
প্রথমটাও পড়েছি এটাও পড়লাম বেশ সুন্দর হইছে। তবে একটা প্রশ্ন আপনি কি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন কোনোদিন? এত কিছু জানেন দেশটি সম্পর্কে। গল্পের রহস্যটা এখনো পাইনি কিন্তুু?
অনন্য অর্ণব
এটা একটা সিরিজ গল্প দাদাভাই। শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকার বিনীত অনুরোধ করছি।
নিতাই বাবু
[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
একগুচ্ছ গোলাপের শুভেচ্ছা।
অনন্য অর্ণব
ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
ছাইরাছ হেলাল
গল্পের হাত ও দেখছি মাশাল্লা,
সাথে আছি, চলুক।
অনন্য অর্ণব
হা হা হা 😀 দাদাভাই যে কি বলেন,,,আপনাদের সংস্পর্শে এসে মাটি কি সোনা না হয়ে পারে 😄😄
মনির হোসেন মমি
প্রতিটি পর্বেই পূর্বের পর্বের লিংক দিয়ে দিলে পাঠক ইচ্ছে করলেই পড়তে পারবেন। আর গল্পের কথা কি বলব। দারুণ ভাবেই এগুচ্ছে । চাঙ্গি এ্যায়ারপোর্টে,হোটেল মারিয়ানা বে নামগুলো বহুদিনপর আবারো শুনছি আর নিজের স্মৃতিগুলো ফিরে পাচ্ছি। চলুক লেখা।
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
সাবিনা ইয়াসমিন
এই সিরিজের প্রথম পর্ব আগেই পড়েছি। গল্পটি বেশ ইন্টারেস্টিং, নতুন পর্বের অপেক্ষা করছি।
অনন্য অর্ণব
আপু অসংখ্য ধন্যবাদ 🌺
এস.জেড বাবু
ছাদ খোলা গাড়িতে করে উড়তে উড়তে সেই আধো বাংলা বলা আমেরিকান ও অবন্তিকার সাথে আমরাও পরের মিরাকলের দিকে যাচ্ছি-
দেখি কি আছে সামনে
সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে- প্রচন্ড গতিময়তা।
জিসান শা ইকরাম
গল্পের উপস্থাপনে মুগ্ধ হয়েছি,
খুটিনাটি সমস্ত কিছুইই এনেছেন আপনি গল্পে,
এ তো গল্প নয়, যেন মুভি দেখছি।
হোটেলে কি অপেক্ষা করছে তা জানার জন্য ছুটছি ৩য় পর্বে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অসাধারণ লিখেছেন। খুব ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়…..
ত্রিস্তান
কৃতজ্ঞতা অনিমেষ দাদাভাই। বিশেষ কারণে আপাতত অবন্তিকা সিরিজটা বন্ধ রেখেছি। জীবন সায়াহ্নে কোন একদিন সময় পেলে হয়তো সম্পন্ন করবো এই সিরিজ গল্প। ভালো থাকবেন সবসময়।
আরজু মুক্তা
আপনার চোখ গল্পের পৃষ্ঠায়।
ভালো লাগলো
ত্রিস্তান
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।