আগের পোস্ট শোণিত ধারায় শানিত চেরনা
মোদের গরব মোদের আশা আ’মরি বংলা ভাষা
‘বং আল’ একটি অসাম্প্রদায়িক জনপদ
এই জাতির আর একটি প্রাচীন বৈশিষ্ঠ্য এই যে, অতীতে বাংলার শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক ছিল শিথিল। সাধারণ মানুষ এদেশীয় কৃষ্টি ওঠো ভাষা বহন করলেও শাসক গোষ্ঠী ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা বর্জন করত। ফলে কোন বহিরাগত রাজার আক্রমনের সময় ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে তেমন কোন প্রতিরোধ গড়ে উঠত না। একারনে যুগে যুগে নতুন নতুন শাসকগোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়েছে, কিন্তু সাধারন মানুষের প্রতিক্রিয়া হয়েছে সামান্যই। তবে সময়ের সাথে সাথে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রাজা পরিবর্তনের ফলে সামাজিক জীবনে প্রত্যক্ষ ওপরোক্ষ ঘাত্ন প্রতিঘাতে সাধারণ মানুষ রাজনীতি সমাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছে ধীরে ধীরে। সংশ্লিষ্টতার ব্যাপক বিকাশ ঘটে ইংরেজ আমলে যাখন আধুনিক শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি অবর্ননীয় অত্যাচারে মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে । লক্ষনীয় বিষয় যে উপমহাদেশের ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু হয় এই বঙ্গ প্রদেশ থেকে যা পরবর্তিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। বগুড়া রংপুর, দিনাজপুরের ফকির মজনু শাহ্, নূরুলদীন, পীতাম্বরের লড়াই (১৭৬৯-১৮০০) ওহাবী ও ফারাইজী বিদ্রোহ(১৮২০-১৮২৪),সিপাহী বিপ্লব(১৮৫৭), নীল চাষীদের বিদ্রোহ(১৮৫৯-১৮৬১)এবং চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগ্রাম(১৯৩০)ইত্যাদি ঘটনা ধীরে ধীরে বাঙ্গালীকে একটি ইস্পাত কঠিন ও সক্রিয় জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠীত করেছে।এর মধ্যে বাঙ্গালী তার হাজার বছরের লালিত সুপ্ত জাতি চেতনাকে শানিত ও বিকশিত করতে পেরেছে। একারনেই ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির মধ্য দিয়ে হঠৎ করে এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কহীন পূর্বপাকিস্তান নামক একটি ভূঁইফোড় উপরাষ্ট্রের সৃষ্টি এদেশের মাটি ও মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়নি। কারন পূর্বপাকিস্তানের অস্তিত্বের অর্থই হল বাংলাদেশ বাঙ্গালী ও প্রাচীনকাল থেকে অসংখ্য প্রতিকূলতার মুখে ক্রমবিকাশমান নৃতাত্তিক,ভাষাতাত্বিক ও ভৌগোলিক স্বাতন্ত্র্য তথা নিজের মৌলিক পরিচয়কে সরাসরি অস্বীকার করে একটি বিদেশী পরিচয়কে ধারন করা।
পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী যেমন সকল বস্তুই নিম্নশক্তি স্তরে স্থিতিশীল থাকতে পছন্দ করে তেমনি একটি জাতির মূল বিকাশধারাকে সাময়িকভাবে ভিন্নখাতে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু কালক্রমে তা মূলধারায় ফিরে আসবেই এবং সে পথেই প্রবৃদ্ধিলাভ করবে। সুতরাং এ সত্য আমাদের পরিষ্কার ভাবে বুঝে রাখা দরকার যে, ১৯৪৭ সালের হটকারিতা সংশোধনের নিমিত্তে ১৯৭১সালের আগমন ছিল ঐতিহাসিক ভাবেই অবধারিত।
চলবে —-
১৯টি মন্তব্য
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। নাহলে ভারত ভাগের সাথে সাথে আমাদের স্বাধীনতার সময়কালও পিছিয়ে যেত বলে আমার নিজের ফহারনা। ৭১ না হয়ে ৮১ অথবা ৯১ ও হতে পারতো।
খসড়া
ধন্যবাদ কোন যুদ্ধ পেতে পারে না যদি তা না হয় শাসিতের প্রতি শোসিতের অবস্থান।
ঠিকই বলেছেন হয়ত তরান্বিত করেছে, তবে সারা বিশ্বযুরেই তখন এই পরিবর্তন লিক্ষনিয় ছিল।
খেয়ালী মেয়ে
অজানা এবিষয়গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ..
খসড়া
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম থেকেই প্রতিটি পোষ্ট অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে পড়ছি
অত্যন্ত সহজ ভাবেই লিখেছেন বোধগম্য করে
বাঙালি চরিত্র বুঝাতে তৎকালীন সমাজ,শাসক ইত্যাদি এনেছেন
ধীরে ধীরে বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধ যে অপরিহার্য ছিলো- তাও ভালো ভাবেই উপস্থাপন করেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
খসড়া
আপনি আমার লেখা মন দিয়ে পড়ছেন এবং মন্তব্য করে যাচ্ছেন এতেই আমি কৃতজ্ঞ।
শিশির কনা
অনেক কিছু জানলাম আপনার পোষ্ট সমূহ থেকে।মুক্তিযুদ্ধ অবধারিতই ছিলো।
খসড়া
এখনও সন্ত্রাস নির্মূল হও্যাতাও সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেভাবে স্বাধীনতাকে মুঝে দেবার ইতিহাস সৃষী হয়েছিল ৭৫ পরবর্তি সময়ে কই রুখতে কি পেরেছে?
ব্লগার সজীব
তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্টে অনেক ভালো লাগা আপু।
খসড়া
ধন্যবাদ সজীব।
বৃষ্টিহত ফাহিম
মূলধারায় কি আদৌ ফিরে আসা গেছে?
খসড়া
ঐ যে বারে বারে এসেছে বিদেশীরা তাদের সুতীক্ষ্ণ নখ ও দাঁত নিয়ে আবার ফিরে গেছে পরাজিত হয়ে লেজ গুটিয়ে। আমরা ফিরবার চেষ্টায় অবিচল মূলধারায়।
ছাইরাছ হেলাল
এমন করে জানা ছিল না।আপনি না লিখলে জানা হোত ও না।
ভাল থেকে এমন লিখুন বেশি করেই।
খসড়া
হেলাল ভাই যাক আপনিও বললেন অনেক ছিল অজানা। তাতেই আমি কৃতার্থ।
প্রজন্ম ৭১
ব্লগার খসড়া খোলস ছেড়ে বেড় হয়ে আসছেন।প্রতিটি পর্বই পড়েছি।একজন পুর্ন ব্লগারের লেখা পড়লাম অনেক দিন পরে।
খসড়া
প্রজন্ম৭১ ইতিহাস এবং সঠিক ইতিহাস না জেনে কোন জাতি টিকতে পারে না কোন আন্দোলন সফল হয়না। আবার আংশিক ইতিহাস প্রলয়ংকরি। তাই জানবার সময় বিস্তারিত জানুন। একজন অজানা লোকের লোক কথা এবং একজন ইতিহাসবিদের ইতিহাস দুটোর মাঝ থেকে আনতে হবে সত্য।
নওশিন মিশু
বাঙ্গালী এক অদ্ভুত জাতি কখনোই কারো অধীনতা মেনে নেয়নি। বার বার বিদ্রহ করেছে। তাই এই জাতির মুক্তি ছিল অবধারিত। তথ্যবহুল লেখা …. 🙂
খসড়া
বাঙ্গালী জ্বলে, পুড়ে মরে ছাড়খার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
শুন্য শুন্যালয়
প্রত্যেকটি পোস্ট অসাধারন হয়েছে। ইতিহাস ভিত্তিক এই লেখাগুলো আরো চাই আপু। যেই লড়াইগুলোর কথা লিখেছেন, জানা থাকলে এগুলো সম্পর্কে জানতে চাই।