১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর যশোরের পতন হওয়ার পর সেখানকার কারাগার থেকে মুক্তি পান দুজন বিদেশী । ২০ বছর বয়সী স্ল্যাভেনের সঙ্গী ছিলেন অ্যালান ল্যাঙ্গল কনেট । ২৯ বছর বয়সী এক মার্কিন তরুণী। দুজনেই ছিলেন অপারেশন ওমেগার সদস্য। অক্টোবরের শুরুতে অ্যালেন ও স্ল্যাভেন যশোরের উপকণ্ঠে শিমুলিয়া প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলো শ’দুয়েক
শাড়ি-আসন্ন শীতের জন্য গরম কাপড় চোপড়, বিস্কুট। ৪ অক্টোবর একটি গির্জা থেকে তাদের এসব ত্রাণসামগ্রী সহ গ্রেফতার করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী।
সাদা চামড়া বলেই হয়তো রেয়াত পান দুজন,তার ওপর অ্যালেন আবার মার্কিন নাগরিক। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুবছরের জেল দিয়ে দুজনকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য নিজেদের বিপন্ন করে প্রায় দুমাস জেল খেটেছিলেন। সঙ্গী ছিলেন আরো অনেকেই।
অপারেশন ওমেগা ছিল ওয়ার রেজিস্টার্স ইন্টারন্যাশনালের (WRI) সহযোগী সংগঠন। WRI নিজেদের দাবি করে থার্ড ক্যাম্প হিসেবে।মূলত এটি ছিলো একটি বহুজাতিক
ট্রান্সন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান, পূর্ব পাকিস্তানে এর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন রজার মুডি। আর এই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করতেন সিএএস কবীর।
১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট ৮ জনের একটি দল নিয়ে মুডি উদ্বোধন করেন অপারেশন ওমেগার। পেট্রাপোলে দুটো ল্যান্ডরোভার বোঝাই ত্রানসহ তারা ধরা পড়েন। ২৬ ঘন্টা আটকে রাখার পর তাদের আবার পুশব্যাক করে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ। ৫ সেপ্টেম্বর ৪ জনের একটি দল পায়ে হেটে বহনযোগ্য কিছু ত্রান নিয়ে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশে। যথারীতি তারা ধরা পড়েন এবং ১১ দিন আটকে রেখে তাদের ইংল্যান্ডের প্লেনে তুলে দেওয়া হয়। ওই একই
দিনে একটি মিনি ট্রাক নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেন আরো দুজন। একটনেরও কিছু কম খাদ্য
সামগ্রী,ওষুধ ও কাপড়চোপড় তারা বিলি করেন ৬০০ বাঙালীর মাঝে। এটি ছিলো একটি সফল অভিযান। ১০ সেপ্টেম্বর পুনরাবৃত্তি ঘটে তার। এবার তিন জনের একটি দল পাঁচ দিনের এক সফল অভিযাত্রায় তাদের ত্রাণ কর্মসূচী চালায় বাংলাদেশ সীমান্তে। অ্যালেন ও গর্ডনের অভিযান ছিলো অপারেশন ওমেগার ষষ্ঠ এবং মোট ৯ বার সীমান্ত অতিক্রম করে সংগঠনটির সদস্যরা। পাকিস্তান সরকার কিন্তু এই তৎপরতাকে ভালো চোখে দেখেনি। তারা প্রায়ই পত্রিকায় বিবৃতি দিতো যে মাদকাসক্ত একদল বিদেশী অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম
করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, তাদের আটক করা হয়েছে কিংবা দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বলতেই হয় সে সময় বিশ্ববিবেককে নাড়া দিতে যেসব সংগঠন মাঠে নেমেছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাদের কথা খুব একটা কৃতজ্ঞতা সহকারে আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এদের মধ্যে হিপ্পি ছিলো, চার্চ ভিত্তিক সংগঠন ছিলো, বিপ্লবী ছিলো। তারা কিন্তু কোন লাভের খোজে আসেন নি। এসেছিলেন নিজেদের বিবেকের তাড়নায়।
আজ আমরা কতজন এই বিবেকবান মানুষগুলোর কথা মনে রেখেছি???
১৫টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
অকৃতজ্ঞতার পরিচয় আমরা অনেকই দিয়ে এসেছি। কজনই বা জানি এসব বিবেকবান মানুষদের কথা। একবার ভাবুন তো ভারত আমাদের কি দিয়েছিল যুদ্ধের সময়?
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। আপনার কাছ থেকে সবসময়ই এমন শ্রদ্ধার পোস্ট পাই আমরা। ভালো থাকুন, আরো শেয়ার দিন এমন তথ্য।
হোমায়রা জাহান হিমু
ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন এমন অনেক অজানা বিষয় আমাদের লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে গেছে এবং যাবে ।
তাছাড়া সব কিছু ভুলে যেতে আমরা খুবই পটু , যা প্রমাণিত ।
অনেক দিন পর লিখলেন ।
হোমায়রা জাহান হিমু
কিছুদিন পড়ালেখা নিয়ে একটু চাপ গেছে। তাই ব্লগে লেখা হয় নি।ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
যারা প্রকৃত অর্থে মানুষের জন্য কাজ করে তাঁরা কোন প্রতিদান চায় না ,লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
হোমায়রা জাহান হিমু
তাদের প্রতিদান দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের সেই যুদ্ধের সময়ে এনারা আমাদের পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন ।
কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করছি জানা অজানা সেই সব মানুষগনকে ।
তাঁদের সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
এমন লেখা শেয়ার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
হোমায়রা জাহান হিমু
আপনাকেও ধন্যবাদ
স্বপ্ন নীলা
১৯৭১ সালে অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন — কিন্তু অনেকেই আমরা তাদের নাম জানি না — তাদেরকে মন হতে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি —–আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শেয়ার করেছেন — আপনাকে অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন সবসময়
হোমায়রা জাহান হিমু
ধন্যবাদ।
অজানা এক পথে চলা
এনাদের কথা জানা ছিলনা । আমাদের বিদেশী বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধা । আপনাকে ধন্যবাদ ।
বনলতা সেন
অজানাকে জানালেন ।
আরও লিখুন ।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এটি জানা ছিলো না । ধন্যবাদ আপনাকে ।
আজিম
বিদেশী বিবেকবান অনেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ওনাদের সামর্থমত আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।
তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই হৃদয় থেকে।
ধন্যবাদ ভাল এই পোস্টের জন্য।
কৃন্তনিকা
সত্যিই জানতাম৷ না৷ ৷ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি লেখা লেখার জন্য৷ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেখানে আজ বিকৃত সেখানে বিদেশীদের অবদান মনে না করাই স্বাভাবিক৷ 🙁