আমার নাম মামুন । আজ আমি আপনাদের একটা অন্যরকম ভালবাসার গল্প শোনাব ।
মেয়েটির সাথে পরিচয় হয়েছিলো ফেসবুকে । দুজনেই দুজনের লেখা খুবই পছন্দ করতাম । একদিন ও আমাকে চ্যাটে নক করে বলল আজকে আমি আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই ।
আচ্ছা বলুন ।
আমি কিন্তু আসলে একজন মেয়ে নই ।
মেয়ে না হলে , তবে কি ছেলে ?
না আমি ছেলেও না ।
তাহলে ?
আমি তৃতীয় লিঙ্গ , সহজ ভাষার বলতে গেলে আপনাদের দেয়া প্রচলিত নামে হিজড়া ।
কি বলছেন এসব!!
হ্যাঁ আমি যেটা বলছি এটাই চরম সত্যি । আমি বুঝতে পারছি আপনি ক্রমশ আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছেন তাই আসল সত্যি টা আপনাকে জানিয়ে দিলাম । আমি চাইনা কেউ আমাকে প্রতারক মনে করুক ।
যদি কিছু মনে না করেন আপনার ব্যাপারে আর একটু বলবেন ?
আমার ব্যাপারে আর কি বলব । ছোট বেলায় মা বাবা কাউকেই পাইনি একটা এতিমখানায় বড় হয়েছি । একটু বড় হওয়ার পর এতিমখানার লোকেরা যখন বুঝতে পারল আমি আর দশটা সাধারণ মানুষের মত নই তখন ওরা আমার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করল । মেয়ে ছেলে বন্ধু সবার থেকে আলাদা হয়ে পড়লাম । সেদিন থেকেই শুরু হল আমার একাকী জীবন । আমার এই অসহায় একাকিত্বের সুযোগ নিতে চাইল পরিচিত পুরুষ নামের কয়েকটা পশুরা । সেখান থেকে চলে আসি এলাকার হিজড়া দের দলে । পুরুষ মানুষদের তখন থেকেই আমি ঘৃণা করি । হিজড়া দের দলের সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না । আমার জন্মের ত্রুটির জন্য তো আর আমি দায়ী নই তবে আমি কেন দায় সারাজীবন বয়ে বেড়াব ? এরপর সেখান থেকে পালিয়ে ঢাকা চলে আসি । আপনাদের সমাজ আমাকে স্বীকৃতি দেবে না বরং পদে পদে অপমান করবে তাই একটা মেয়ের ছদ্দবেশ নিলাম । পুরুষের দূর্বল দিক আমি ভালোমত জানি , জানি কিভাবে পুরুষকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে হয় ।
আপনাকে অন্যসব পুরুষের মত মনে হয় নি তাই আপনার কাছে সব কথা বললাম ।
কিন্তু ! আমি কি আপনার সাথে দেখা করতে পারি ?
পারেন , তবে এখন না । সময় হলে আমিই আপনাকে জানাব ।
এরপর প্রায় দুই মাস ওর কোন খবর নেই । ম্যাসেজ দিলে রিপ্লে আসেনা ।
আমি প্রতিদিন তাঁর ম্যাসেজের অপেক্ষায় থাকি ।
হঠাৎ একদিন ওকে অনলাইনে পাই ।
কি ব্যাপার আপনি এতদিন কোথায় হারিয়ে ছিলেন?
কোথাও হারায় নি তবে আজ এবং এখন হারিয়ে যাব । চিরতরে হারিয়ে যাব । আপনাদের পৃথিবীতে আর আপনাদের বিরক্ত করতে আসব না ।
কেন! কি বলছেন এসব উল্টাপাল্টা ।
আমি আপনার সাথে কোনদিন মিথ্যা বলিনি আজও বলছি না । আমি হয়ত পুরুষ বা মহিলা নই কিন্তু মানুষ তো । আপনাদের সমাজে পুরুষ আর মহিলা ছাড়া কারও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার অধিকার নেই । আমার রুম মেট সহ অফিসের সহকর্মী রা কিভাবে যেন টের পেয়েছে আমি মেয়ে নই । তারপর প্রকাশ্যে অপমান সহ আমার নারীত্বের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে । মানুষ হিসাবে কি আমার এতটুকু লজ্জাবোধ আত্মসম্মানবোধ থাকতে নেই !
অনেক চেষ্টা করেছিলাম মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার । পারলাম না আপনাদের সমাজ আমাকে বাঁচতে দিল না । আমি চিরতরে চলে যাচ্ছি ।
আপনি কি আত্মহত্যা করতে চাইছেন !
চাইছি নয় । আমি অনেকগুলি শক্তিশালী ঘুমের ঔষধ খেয়েছি । আমার অনেক ঘুম আসছে । আমি অনেকদিন শান্তিতে ঘুমাই নি আজ ঘুমাব ।
আপনি এ কি করছেন । আপনি আপনার মোবাইল নম্বর দিন । আমি আপনাকে মরতে দেব না ।
আমি ….আমি …. তোমাকে অনেক ভালবাসি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না ।
যাক মরার আগে অন্তত এতটুকু জেনে মরতে পারলাম ,পৃথিবীতে অন্তত কেউ আমাকে ভালবাসত ।
এরপর অনেকবার চেষ্টা করেছি অনেক ম্যাসেজ দিয়েছি কোন রিপ্লে আসেনি । আজও ফেসবুক খুলে তাঁর নামটার দিকে অপেক্ষা করে থাকি যদি কখনো তাঁকে আবার পাই । যে কোন মূল্যে তাঁকে আমি বাঁচাবোই।
জানি এই সমাজ তাঁর আর আমার সম্পর্ক কথনোই মেনে নেবে না । যে সমাজে মানুষের পরিচয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় সে সমাজ আমার নয় ।
আমারও প্রয়োজন নেই এমন সমাজের ।
২৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এদের সাথে আমরা যে আচরন করি তা অত্যন্ত অমানবিক
অথচ এ জন্য তারা দায়ী নয়।
লেখাটি ভালো লেগেছে।
সঞ্জয় কুমার
অথচ ওরা শুধু মানুষ হিসেবেই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চায় ।
ধন্যবাদ মামা ।
আবু জাকারিয়া
সমাজে এরা কতটা অপমানীত হয় তা মোসারফ করিমের একটা নাটক দেখলে কিছুটা অনুভব করা যায়। নাটকটার নাম মনে পরছেনা। আমরা কখন একটা সুন্দর সমাজ পাব, যেখানে মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না? থাকবে না কোন বর্নবাদ। শুধু থাকবে ভালবাসা।
সঞ্জয় কুমার
সবার মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
করুনা বা ঘৃণা নয় ওদের জন্য প্রয়োজন ভালবাসা ।
নওশিন মিশু
মন খারাপ করা গল্পটা । মানুষে শুধুই মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করা হবে, এমন এক পৃথিবীর প্রত্যাশা রেখে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ ভাই ….
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ আপু ।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন, এদের পরীক্ষা সারাজীবন ধরেই চলে। আমরা ভুলে যাই, life can change in mere seconds..
গল্প হোক আর না হোক, অক্ষরগুলো মানবিকতার বিচারে উতরে যায়।
সঞ্জয় কুমার
যথার্থ বলেছেন । ধন্যবাদ ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সুনদর একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন।হ্যা ওদের অনেক অবহেলা সইতে হয়। -{@
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ ভাই । মানুষের মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক
মোঃ মজিবর রহমান
মানুষ মানুষের সাথে এরকম ব্যাভার করা কি সম্ভব?
সে যে লিঙ্গেই হকনা কেন।
সঞ্জয় কুমার
হুম সেটাই তো । মানুষকে মানুষ ই ভাবা উচিত ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ইস! কি কষ্টকর!! অনেক খারাপ লাগছে পড়ে। স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে আমরা কেনো তাঁদের মেনে নিতে পারিনা? সে তো কারো ক্ষতি করছিলো না। কেনো আমরা তাঁকে অপমানিত করে তাঁর বাঁচার ইচ্ছাটাই নষ্ট করে দিলাম? ঈশ্বর আমাদের পূর্ণাঙ্গ করে পাঠিয়েছেন! একবারও কেনো আমাদের মনে হয়না এমনটা আমারও হতে পারতো!!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের সকলের উচিত সমাজের এই অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরা।
সঞ্জয় কুমার
ওরা হয়তো শারীরিক প্রতিবন্ধী । ।
কিন্তু সবকিছু থেকেও আমরা মানুষিক প্রতিবন্ধী ।
ওদের কাছে আমাদের ই পরাজয় হল ।
ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক বলেছেন। ওদের প্রতি আমাদের আচরণ তাই প্রমাণ করে।
আবারও ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে ও অশেষ ধন্যবাদ ।
ব্লগার সজীব
খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ সজিব ভাই । ।
শুন্য শুন্যালয়
গল্পটা গল্পের মতোই। যদি সত্যি হতো!!! অন্তত একজনের আত্মত্যাগেও যদি আমাদের মনমানসিকতা বদলে যেত!!!
সুন্দর লিখেছেন।
সঞ্জয় কুমার
সবার মাঝে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হোক ।
ধন্যবাদ আপু ।
খসড়া
হৃদপিন্ড এমন টুকরা টুকরা হয়ে গেল, আর হৃদয়ের মাঝখানতা ফাঁকা।
সঞ্জয় কুমার
সত্যিই তাই ।
ধন্যবাদ আপনাকে
হৃদয়ের স্পন্দন
হৃদয় ছোয়া করুন ইতিহাস
সঞ্জয় কুমার
হুম