#শিক্ষাখাত এবং চিকিৎসাখাত নিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী বানিজ্য হচ্ছে”
বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে গেলে প্রথমতই বলতে হয় ব্যবসা বানিজ্যের উত্থানের নাটকীয় গল্প – সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলীমা আর তার স্বাধীন স্বত্ত্বার গুন কীর্তণ ফলানোর চেষ্টা অনেক হয়েছে।এসব বলার পেছনে বানিজ্যিক স্বার্থটাই অগ্রগন্য বলে বিবেচিত।
বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন আলামত দেয়।
একটু গভীরে গিয়ে ভাবলেই নিজ থেকেই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন-কিন্তু ভাবতে হবে-অকেজো ব্রেইনকে সার্প করতে হবে,কাজে লাগাতে হবে।
বানিজ্যেের এমন জঘন্য প্রতিক্রিয়া মানবিকতায় নৈতিকতায় চরম অবক্ষয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে,জাতীয় বিবেককে।
তাহলে বানিজ্য প্রেক্ষাপটে কিছু মুক্ত আলোচনা হউক_আপনিও আপনার মতামত পেশ করেন স্বাধীনভাবে।আশা করি অন্ধকারে আটকে থাকবেননা।সত্য বলার মতো সৎ সাহস জাগ্রত করতে হবে।
বাংলাদেশের বানিজ্যকে শ্রেনী বিন্যাস করলে প্রথম দ্বিতীয় এবং ৩য় Rank এর পর্যায়ক্রম টা হয় এমন।
(১)শিক্ষাখাত-
(২)চিকিৎসাখাত-
(৩)রাজনৈতিক অহেতুক কারুকাজ।
এরপর পর্যায়ক্রমে আসবে অন্যগুলো।
শিক্ষাখাতে বানিজ্যটা হয় সবচেয়ে বেশী-ভর্তি বানিজ্য,কোচিং বানিজ্য,স্পেশাল কেয়ারের বানিজ্য,প্রশ্ন আউট বানিজ্য,লবিং বানিজ্য,শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য,এরকম অসংখ্য বানিজ্য হতে প্রতি সেকেন্ডে কয়েকশত কোটি টাকা অবৈধ উপায়ে অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট বন্দি হচ্ছে।আজকের কচিকাচা শিশুরাও এই বানিজ্যিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠছে।তারা এই বয়সেই অনুধাবন করতে শিখে যাচ্ছে শিক্ষা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া,সহজ বাঙলায় যাহাকে কামাই বলে গন্য করা হয়ে থাকে।মানে কামাই করার জন্য লেখাপড়ায় মনোনিবেশ।
তারা বুঝে যাচ্ছে এই সমাজে টাকাই সব কিছু,টাকা ছাড়া সব কিছুই বৃথা।যখন শ্রদ্ধাতূল্য শিক্ষকরাই স্নেহতূল্যদের নিয়ে বানিজ্য উন্মাদনায় মুক্তভাবে সামিল হয়েছে-সেই শিশুদের ভবিষ্যৎ কোথায়, ওদের প্রজন্ম কেমন হবে সে বিষয়টা নিশ্চয় আপনি ক্লিয়ার হয়ে গেছেন।
ওদের মধ্যে ৬০/৭০ ভাগই চাকরি পাবেনা।হোপলেস হয়ে অসৎ পথে ইনকাম করার জন্য মনকে রাজি করাবে-কারন এই সামাজ টাকা ছাড়া অন্য কিছুকে মূল্যায়ন করেনা।.
.
হ্যাঁ,ওদের প্রতিক্রিয়াটা হবে আরও ভয়ংকর,আমাদের এই প্রজন্মের চেয়েও খারাপ কিছু।
ওরা যেখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়বে টাকার জন্য স্বার্থের জন্য।
দূর্নিতীর কালো অন্ধকার জড়িয়ে নিবে খুব সহজেই।কারণ,শিক্ষা জীবনের ভুক্তভোগী ওরা,চরমভাবে ভুগানো হয়েছে শিশু বয়স থেকে।তাই ওদের সান্নিধ্যে এলেই বিপদ, ওদের কবলে যারাই পড়বে তাদেরকেও ভূগতে হবে ওদের মতো নতুবা আরও কয়েকগুন বেশী।বিন্দুমাত্র ছাড়া পাবেনা কেউ।নৈতিকতাকে রাক্ষসের মতো গিলে ফেলেছে বাঙলার সভ্যতা।এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকৃত মানুষ স্মৃষ্টির পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা।মানবিক মূল্যবোধের চর্চা এদেশের কোথাও হচ্ছেনা।
.
হতদরিদ্র্য/মধ্যবিত্ত্ব পরিবারগুলির গল্প নিশ্চয়ই শুনেছেন।জমিজমা ভিটেমাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য।তিনি বা তারা আদৌ জানেননা-এই সন্তানেরা কোন গন্তব্যের দিকে পা বাড়াচ্ছে।নৈতিক ও মানবিক বিকাশ না হওয়ায় এই সন্তানরাই বাবা মাকে বঞ্চিত করবে পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে।বউকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতায় নিমগ্ন হবে।খোঁজ খবর নেয়ার অবকাশ পাবেনা-ওই যে শিক্ষায় বানিজ্যিক পটভূমি দেখে ভুগে ভুগে বেড়ে উঠছে।অর্থের লালসা তাই আকাশ সমান। গভীর ভাবে গ্রাস করে ধরবে।এমন শিক্ষা দিয়ে কিচ্ছু হবেনা,কিচ্ছুনা।
এবার চিকিৎসার বানিজ্যিকীীকরণ প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করা যাক-
প্রথমেই বলে রাখি এদেশের চিকিৎসার উপর স্বদেশী স্বাবলম্বী মানুষদেরই আস্থা নেই-তাই তারা রোগে আক্রান্ত হলে পশ্চিমা বিশ্বে গমন করেন।যাদের অর্থ সম্পদ একটু কম,তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতে গমন করেন।প্রশ্নটা হচ্ছে কেনো করেন,আর কেনই বা আস্থাহীনতা?
প্রথম কারণ-
প্রতারিত হওয়ার ভয়-
দ্বিতীয় কারন_
উন্নত প্রযুক্তির স্বল্পতা_
দেখা গেছে প্রাথমিক পর্যায়ের আলসার ধরা পড়েছে-রিপোর্টে আসলো ক্যান্সার?তার মানে আপনার নিকট থেকে বানিজ্যিক ফায়দা উসুল করবে অন্তত ১০/১৫ গুন বেশী। এটা একটা উদাহরণ দিলাম মাত্র।এমন হাজার হাজার উদাহরণ নিজ চোখেই প্রত্যক্ষ করার জন্য আশেপাশের মেডিকেলগুলোতে সার্চ করুন।ভয়ংকর সব তথ্য পেয়ে যাবেন।
এই বিষয়ে আলোচনা করলে এক হাজার পৃষ্টার রচনাতেও ফুরোবেনা।তার চেয়ে বরং মূল প্রেক্ষাপটে আসি।আপনার অর্থ নেই আপনার চিকিৎসা হবেনা-দ্যাটস ফুল এ্যান্ড ফাইনাল।আফসোস হচ্ছে তাইতো!
এটাই সত্যি-এদেশে হত দরিদ্রদের জন্য নিবেদিত চিকিৎসা ইন্সটিটিউট আজও গড়ে ওঠেনি।রুগীর পুনর্বাসন এমনকি মৃত লাশকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যও বানিজ্য চলে।রোগের প্রাদুর্ভাব যতো বেশীদিন স্থায়ী হবে-তাদের বানিজ্যও ততই লাভবান হবে-এজন্য ওষধেও ভেজাল মিশ্রিত করা হচ্ছে-যতো বেশী অর্থের যোগান সার্ভিসো ততো ভালো-অর্থাৎ চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা চিকিৎসার কল্যানে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের তুলনায় চার পঞ্চমাংশেরোো বেশী।অনেকেই আছেন নীরব মৃত্যুকে সাদরে গ্রহন করে নেয়,কোনো চিকিৎসা ইন্সটিটিউটের দারস্থ হওয়ার ইচ্ছেও পোষণ করেনা।
.
এ থেকে একটা বিষয়ই স্পষ্ট হয়।খুব জঘন্য সিস্টেমের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে যাচ্ছি আমরা।এদেশে মানুষের জীবন নিয়ে বানিজ্য করা হচ্ছে,শিশুদের আলোকিত ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।সুতরাং একটি জাতীয় প্রশ্ন?হাল ধরার কাণ্ডারী কোথায়?আদৌ কি নেই-তাই যদি হয়,তাহলে নিজ নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট আন্দোলন গড়ে তুলে ধীরে ধীরে সম্মিলিত হতে হবে-না হলে অবস্থা আরও ভয়ংকর পরিনতির দিকে ধাবিত হবে।কার্ল মার্ক্সস এর পুঁজিবাদ বিদ্যা বিষয়ে ধারণা রাখা উচিৎ সকল মানুষের।
এই পুঁজিবাদের মূল উদ্দেশ্যই মানুষকে টার্গেট করে বানিজ্যিক স্বার্থ হাসিল করা।
(মাসুদ চয়ন)
১১টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
বর্তমান সময়ের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা।সে জন্য অসংখ্য ধন্য।আপনার মতে আমিও একমত। শিক্ষার উদ্দ্যেশ্য আগে ছিলো মানুষের মত মানুষ হওয়া,ছিলো আদর্শলিপি।আর এখন শিক্ষার নামে শিশু কিশোরদের মাঝে এক আতংক তৈরী করে দিয়েছে কারন গোল্ডেড কিংবা জিপিএ ফাইভ না পেলে সে ভাল কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।তার মননে আগেই ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে কর্পোরেট দুলিয়ার হাল হকিকত।তাইতো শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ হবে না হবে ধান্দাবাজ।আর চিকিৎায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহার ও সবার জন্য চিকিৎসা সেতো কল্পনা কেবল। চকুরীর বাজার যখন কলংক মানে ঘুষ মুক্ত হবে তখনিই এ দেশে তাদের কাছ হতে সেবা পাবেন।
আরো লিখুন এমন সব সমসাময়িক লেখা।
মাসুদ চয়ন
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রিয়
শিরিন হক
সমসাময়িক বিষয় তুলে ধরেছন এবং এসম্পর্কে লিখে সাহসিকতার প্রমান দিয়েছন ধন্যবাদ প্রাপ্য আপনার।
আমারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি আমাদের এবং সন্তনদের তা অজানা।
এ দায় কে নিবে এর প্রতিকার ই বা হবে কিভাবে?জিম্মি হয়ে আছি গোটা সমাজব্যবস্থার কাছে।
শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা ক্ষেত্র আজ ঘুনে ধরা কাঠের মতো। চেয়ে দেখবার কেউ নাই।লোভ যখন শিখরে দাড়িয়ে আমরা মরি হতাশায়।
মাসুদ চয়ন
আসলেই তাই।সত্যি বলেছেন আপনি।প্রতিনিয়ত অবস্থার অবনতিই পরিলক্ষিত হচ্ছে
জিসান শা ইকরাম
শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী, তবে কোনো খাতেই দুর্নীতি, লুটপাট কম হচ্ছে না।
শিক্ষা, চিকিৎসা খাতের দুর্নীতি জাতিকে মেধা শূণ্য এবং স্বাস্থ সেবা বঞ্চিত করে দিচ্ছে।
আমরা বিভিন্ন ভাবে একটি চরম অন্ধকারময় সময় প্রবেশ করতে যাচ্ছি, এ থেকে পরিত্রাণের পথ নেই মনে হয়।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে অত্যন্ত ভালো একটি পোষ্ট দিলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
মাসুদ চয়ন
ভালোবাসা,ভালো থাকবেন দাদা
তৌহিদ
আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি চয়ন ভাই। আসলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গিয়ে আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। জনগন তাদের মৌলিক চাহিদা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।
ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
মাসুদ চয়ন
ভালোবাসা ভাই
সাবিনা ইয়াসমিন
৩- রাজনৈতিক অহেতুক কারুকাজ !! শব্দটায় ব্যাপক বিনোদন পাওয়া গেলেও অর্থ অত্যন্ত জঘন্য। আসলেই এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গুলোতে কল্যান কম আর অহেতুক কারুকাজ বেশি।
শিক্ষা আর চিকিৎসা এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। জাতির মেরুদন্ড তৈরিতে যাদের ভুমিকা অসীম রাখার কথা ছিলো তারা নিজেরাই নিজেদের মেরুদন্ড হীনতায় ভুগছে। আর চিকিৎসকরা এখন নিজ প্রবৃত্তিতে আবদ্ধ।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আপনার উপলব্ধ ভাবনা পড়ে ভালো লাগলো। আরও লিখুন, শুভ কামনা 🌹🌹
মাসুদ চয়ন
ধন্যবাদ আপু,সবসময় ভালো থাকবেন
আরজু মুক্তা
একবার আমি ভিজিটে ছিলাম পিএসসি পরীক্ষায়।দেখলাম একটা মেয়ে কাঁদছে।জিজ্ঞেস করতে বললো আমি তো রিডিং পড়তে পারিনা।আমি তো থ! তাহলে এই মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে উঠলো কেমনে?