প্রিয়তমেষু,
শুরুতেই আমার ভালোবাসা রইল, আশা করি স্বামী সন্তান নিয়ে একপ্রকার ভালো আছো। তুমি ভালো থাকো, বিধাতার কাছে এটাই আমার চাওয়া। আর আমার জন্য যদি তুমি আশীর্বাদ করে থাক, সেই আশীর্বাদে আমিও একপ্রকার ভালো আছি প্রিয়ে ।
পর-সমাচার,
আজ অনেকদিন যাবত তোমাকে খুব মনে পড়ছে, কেন মনে পড়ছে তা আমি নিজেও জানিনা প্রিয়ে। শুধু এটুকু জানি, যখন নিজের সংসারে অশান্তি বেড়ে যায়, তখনই তোমাকে মনে পড়ে ভীষণভাবে। কেন জান? আমার সাংসারিক অশান্তিতে শুধুই ভাবি তোমাকে নিয়ে। ভাবি এজন্য যে, আমার সংসারে যদি তুমি থাকতে, তাহলে হয়তো এই অশান্তিটা হতোনা। কিন্তু তুমি নেই, তুমি আছো পরের ঘরে, পরের ঘরের ঘরণী হয়ে। তোমাকে না-পাওয়ার ব্যাথায় কাঁদি সময়সময় যখন তোমায় মনে পড়ে। ভাবি তোমাকে নিয়ে, কেন যে সেই এক বিকেলে আমার সামনে তুমি এসেছিলে? কেন-ই-বা তোমাকে দেখে ভালো লেগেছিল! সেই ভালোলাগা থেকেই তো তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তা তুমি নিজেও জানো।
কিন্তু তখন আমি হেরে গিয়েছিলাম, আমার দারিদ্র্যতার কাছে, আমার আর্থিক দূর্বলতার কাছে। সেই জন্যই আমি পারিনি তোমাকে জীবনসঙ্গী করতে। সেসময় তোমার কোন দোষ ছিলনা, তোমার অজান্তে তোমার বাবা তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলে, যা তুমি পরে জেনেছ। তখন তোমারও কোনোকিছু করার ছিলনা।
তোমার বিয়ের দুদিন আগে আমি যখন জানলাম যে, তোমার বিয়ে; তখন তুমি দেখেছ, সাথে গ্রামের সবাই দেখেছে আমার অবস্থা কী হয়েছিল। শুধু কান্না ছাড়া তখন আর কিছুই আমার সঙ্গী ছিলনা। সেসময় তুমি আমার হাত ধরে কেঁদেকেঁদে বলেছিলে, আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও, আমার কোন দোষ নেই। সেসময় তোমার কান্নায় আমার সব যন্ত্রণা দূরে সরে চলে যায়। উল্টো আমিই তোমাকে স্বান্তনা দিয়ে বললাম, তোমাকে না পাওয়ার ব্যথা আমি সইবো কেমন করে প্রিয়ে? তবু সইবো তোমার সুখের জন্যে। তুমি যাও চিরসুখি হও গিয়ে পরের ঘরে।
তারপর তোমার বিয়ের দিন, তুমি যখন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাইছিলেনা, তোমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে সবাই যখন জোরাজুরি করতে লাগলো, তুমি তখন বলছিলে, আমার কথা। বলেছিলে আমার ভালবাসার মানুষটির হাত ধরেই আমি বিয়ের আসরে যেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাই। সবাই তখন অবাক দৃষ্টিতে তোমার দিকে চেয়ে বললো, কে সে তোমার ভালোবার মানুষ? তুমি সোজা কথায়ই আমার নামটা বলে দিলে প্রিয়ে। পাড়ার মানুষ তখন আমাকে খুঁজতে শুরু করে দিলো, আমাকে তো পায় না খুঁজে। পাবে কী করে? আমিতো আছি গ্রাম ছেড়ে একটু দূরে নির্জন এক জায়গায় দুঃখভরা মন নিয়ে।
গ্রামের লোকজন সেখান থেকেও আমাকে খুঁজে বের করে তোমার সামনে এনে হাজির করলো। তখন তুমি আমাকে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে, আমায় জাপটে ধরে তুমি বলতে লাগলে, আমি তোমায় ছাড়া বাঁচবো না, আমি এই বিয়ের পিঁড়িতে বসবো না। তোমার কান্না দেখে আমিও তখন কাঁদছিলাম তোমাকে ধরে। আমাদের দুজনের কান্নায় তখন গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেল। বরযাত্রীরা তখন বলতে শুরু করলো, এই বিয়ে হবে না। এ-কথা শুনে তুমি একটু খুশিই হয়েছিলে।
কিন্তু আমিতো খুশি হই-নি! আমি দৌড়ে গিয়ে বরের বাবার হাত ধরে কেঁদেকেঁদে বলেছিলাম, দোহাই আপনাদের, আপনারা যাবেন না। ওর কোন দোষ নেই, ও ফুলের মতো পবিত্র। ওকে আমি বিয়ের আসরে এনে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিচ্ছি, আপনারা একটু দয়া করুন। এরপর আমি তোমাকে কোলে করে ঘর থেকে বাড়ির উঠানে এনে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেই।
যেই শাড়িটা পড়ে তুমি বিয়ের পিঁড়িতে বসে ছিলে, সেই শাড়িটাও গোপনে আমি কিনে দিয়েছিলাম প্রিয় তোমার মায়ের কাছে। সেটা কি তুমি জানতে? জানতে না প্রিয়ে, জেনেছ হয়তো বহু পরে। তোমার কি মনে পড়ে প্রিয়ে সেই দিনের কথা? আমার এখনো মনে পরে প্রিয়ে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। বিয়ের আসরে পুরোহিতমশাই যখন বিয়ের মন্ত্র পাঠ করছিলো, তুমি তখন শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকেই দেখছিলে বিভোর ভাবে। চারটি কলাগাছের চতুর্দিকে তোমরা স্বামী-স্ত্রী যখন ঘুরছিলে সাতপাকে, আমি তখন কাঁছিলাম তোমাকে হারিয়ে।
তোমার কি মনে পড়ে প্রিয়ে? বিয়ের পরদিন যখন তোমাকে তোমার স্বামীর বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল সেসময়ের কথা? আমার মনে পড়ে প্রিয়ে, মনে পড়ে তুমি তোমার শশুরবাড়ি যেতে চাচ্ছিলে না। আমি তোমাকে জোর করে গাড়িতে বসা তোমার স্বামীর সঙ্গে তোমাকে বসিয়ে দেই। তুমি চলে গেলে তোমার স্বমীর ঘরে, আমি তোমাকে হারিয়ে, দুঃখভরা মন নিয়ে চলে যাই বহুদূরে চাকরির সন্ধানে। দুই বছর পর ফিরে এসে দেখি আমার মায়ের অবস্থা ভালো না, বৃদ্ধ মায়ের অনুরোধ রাখতে গিয়েই আমি বিয়ে করেছি প্রিয়ে, নিজের ইচ্ছায় নয়।
এখন বলো প্রিয়ে, কেমন আছো? শুনেছি তোমার কোলে নাকি দুটো মানিক এসেছে? ওদের দেখতে কেমন, রাজপুত্রের মতো? হয়তো তাই, তোমার চেহারাই ওরা পেয়েছে প্রিয়ে। স্বামীর সোহাগে সোহাগী হয়ে কীভাবে তোমার বর্তমান দিন যাপিত হচ্ছে জানাবে কেমন! আর কি লিখবো প্রিয়ে ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা, শুধু প্রার্থনা করি সুখি হও, স্বামীর সোহাগে সোহাগী হও । আর হ্যাঁ, আমার এই চিঠিখানা পেয়ে তুমি চোখের জলে বুক ভাসাইও না, যদি একফোঁটা চোখের জল ফেলো, তোমার চোখের জলের দাম আমি কখনো দিতে পারবোনা প্রিয়ে । আমার অনুরোধ রইল, তুমি চোখের জল ফেলে আমাকে ঋণী করোনা ।
ইতি;
তোমার কোন একসময়ের ভালোবাসার মানুষ।
আর তোমার মন চাইলে চিঠি দিও এই ঠিকানায়;
নাম;- নয়ন চুরি, প্রেমের ভাণ্ডার মধূপুরী।
প্রযত্নে;- মিষ্টি হাসি, বাদ্যযন্ত্র মোহনবাঁশি।
গ্রাম;- মনে মনে, প্রেম করতে হবে দুইজনে।
পোস্ট;- বনে বনে, কথাবলি গোপনেগোপনে।
থানা;- ফুল বাগান, সুন্দর সুন্দর মধুরগান।
জেলা;- সাবধান, রাখতে হবে মানসম্মান।
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আহা অব্যক্ত কথা গুলোই আজ খুলে বলে দিলেন দাদা, খুব ভালো লাগলো চিঠিটা
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, এটা আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি । এটা চিঠি নয় দাদা, এটা আমার মনের কথাগুলি ।
আমার এই চিঠিখানা পড়েছেন শুনে আমি খুবই খুশি হয়েছি দাদা ।
ইঞ্জা
ভালো লাগলো
ব্লগার সজীব
ইশরে না পাবার কত বেদনা 🙁 ভালই লিখেছেন।
নিতাই বাবু
যার ব্যথা সে বুঝে, অপরে কি বুঝতে পারে?
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই, ভাল থাকবেন আশা করি ।
মেহেরী তাজ
ইয়ে সেই রাজকুমারীর নাম কি কোন ভাবে “তমা” ছিলো?
বিয়েতে এতো কান্নাকাটি হইলে তো সমস্যা দাদাভাই……!!!!
কান্না দেখবো না বিয়ে!?
অনেক আবেগ দিয়ে লিখেছেন দাদাভাই! বুঝা যায়!
নিতাই বাবু
সম্মানিত দাদা, সেই রাজকুমারীর নামটা এখানে দাদা, দেখে নিবেন আশা করি ।
মেহেরী তাজ
জ্বী দিদি দেখে নিয়েছি। এর চেয়ে কষ্টের আর কিই বা হতে পারে। থাক দিদি এটা নিয়ে আর মন খারাপ কইরেন না। আপনার মন ভালো হয়ে যাক। নিন একটা ফুল নিন দিদি -{@
নিতাই বাবু
বুজতে পেরেছি সম্মানিত দিদি। তাতে সমস্যা নেই দিদি, চলতে থাকুক।
মোঃ মজিবর রহমান
দুখের সাথী অতীত, মনের মাঝে তাঁকে চাই।
আর পারছিনা
নিতাই বাবু
ব্লগ ডট বিডিনিউজ ডটকমে আমার লেখাটার কথা কি আপনার মনে পড়ে মজিবর দাদা? যেখানে মন্তব্যের সংখ্যা ছিল ১০৯টি ।,/b>
শুন্য শুন্যালয়
সে সুখীই হবে আশা করি, এতোকিছুর পর কোন মেয়েকে গ্রহণ যে করেছে সে নিশ্চয়ই বড় মাপের মানুষ।
আপনিও তার কথা ভেবে মন খারাপ করবেন না। আফসোস সবাই বউ এর কথা ভুলে প্রিয়েকেই মনে রাখে 🙂 দুস্টামি করলাম।
চিঠি ভালো হয়েছে দাদা।
নিতাই বাবু
সত্যি ছেলেটা এক অসাধারণ মানুষই ছিলো ।
নীলাঞ্জনা নীলা
কোনো স্ত্রী মনে হয়না এভাবে পূর্ববর্তী প্রিয়র কাছে চিঠি লিখবে। কারণ মেয়েরা(কিছু কিছু মেয়ে বাদে) সম্পর্কে সততা রাখার চেষ্টা পুরোপুরিভাবে করে। সত্যি বলতে গেলে চিঠিটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, মেনে নিতে পারবো না আমি।
নিতাই বাবু
সম্মানিত দিদি এটা আমার জীবনের এক স্মৃতিময় জ্বালা । বিশ্বাস না হলে এখানে দেখুন । এখনো খুঁজি তাকে একনজর দেখার জন্য ।
নীলাঞ্জনা নীলা
দাদা ঠিক আছে পড়বো।
প্রহেলিকা
অনেক ভালো একটি লেখা। আপনার লেখার হাত খুব ভালো। লিখুন নিয়মিত। প্রতিযোগিতায় সাফল্য কামনা করি।
নিতাই বাবু
বর্তমানে আমার চোখের খুবই সমস্যা চলছে । চোখের এই সমস্যা নিয়ে হাত ভাল হলে কি আর চলবে?
নীহারিকা
প্রিয়ে কি এ চিঠি পেয়েছে দাদা?
শোহাগী-সোহাগী, মোহনবাসি-মোহনবাঁশি বানানগুলো ঠিক করে নিলে ভালো হয়, নাহলে উনি কিন্ত ভুল বানানে আন্ডারলাইন করে চিঠি ফেরৎ পাঠাতে পারেন। 🙂
তবে এক কথায় দারুন একটি চিঠি।
নিতাই বাবু
আমি এমনিতেই ভুল বানানের লেখক দিদি ।
আর দেখে নিন সেই প্রিয়কে ।
আর হ্যাঁ ভুল ধরে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনাক অনেক ধন্যবাদ জানাই । আশা করি সংশোধন করে নিতে পারবো দিদি ।
নীরা সাদীয়া
আহা, কী বেদনাদায়ক দৃশ্য অঙ্কণ করলেন!
নিতাই বাবু
এই চিঠি, আসলে দিদি বেদনার চিঠি ।
আবু খায়ের আনিছ
যখন মানুষ কষ্টে থাকে তখন অতিতের কাছে সুখ খুঁজে বা ভাবে যদি সেই সময়টা/মানুষটা আমার জীবনে থাকত তাহলে হয়ত আমি সুখি হইতাম।
এটা নিছক একটা বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়, বরং এতে কষ্ট আরো দ্বিগুন হয়ে যায়।
অসাধারণ চিঠি, ব্যর্থ প্রেমিকার অব্যক্ত অনেক কথাই প্রকাশ পেয়েছে। খুব ভালো লিখেছেন।
বাবু
সম্মানিত দাদা, সুখেদুঃখে সবসময়ই তাকে মনে পড়ে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার চিঠি।
নিতাই বাবু
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । আর ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দিতে দেরি হয়েছে বলে । আশা করি ক্ষমা করেছেন ।