একঃ
কোনো একদিন এক অচেনা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত আমি অচিন এক গাছ পেয়ে বসে পড়েছিলাম নির্দিধায়
পরিপাটি পাকা বেদির উপর।
শিল্প সমৃদ্ধ পুঁথি পাঠের উৎসব চলে এ গাছকে ঘিরে।
মন্ত্রমুগ্ধ আমি অবাক হয়ে দেখি শান্ত নিবিড় এ ছায়াদেয়া গাছটিকে।
আমার সমস্ত ক্লান্তির অবসান ছায়ার মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একলা এ অচিন গাছ।
আচ্ছা! অচিন এ গাছকে গাছ না বৃক্ষ বলা যায়?
গাছ বা বৃক্ষের পার্থক্য কি তোমার জানা আছে?
অপেক্ষা ও প্রতীক্ষার পার্থক্যই বা কতোটুকু জানো?
চিরচেনা গ্রামের হাঁটা এ পথে এক কুয়ো আছে
এ কুয়ো শুকনো এখন।
শুনেছি, কোনো কালে কোনো এক জমিদার এ কুয়ো বানিয়েছিলেন।
পিপাসায় কাতর হয় জমিদার পথিকও!
অপেক্ষা করেছিলো হয়তো ঠায় দাঁড়িয়ে এ কুয়ো খননকাল পর্যন্ত
আচ্ছা! ততোক্ষণে সেও কি বসেছিলো এ বৃক্ষের ছায়ায় এক মুহূর্ত?
একফোটা পানির ধারা বইতে দেখে কতোটুকু উল্লাসে সে ফেটে পড়েছিলো?
এ কালে আর কোনো পথিক পিপাসায় উঁকি মারে না এ কুয়োর পানে।
সভ্যতার ভিড়ে বড় অচেনা কষ্টসাধ্য তার জল পাওয়া।
অযত্ন অবহেলায় পরিত্যক্ত তা।
দুইঃ
শিল্প সমৃদ্ধ তোমাকে যা বলা হয় বা যেটুকু শোনা হয় তার কতোটুকু গভীরতা মাপা যায়? যেমন ধরো, আবেগের সে সব হাহাকার!!
যে আবেগে অপেক্ষারা হাতছানি দিয়ে ডেকে যায়।
অপেক্ষায় থাকতে বলে বলে সে পথেরাও ক্লান্ত হয়, ‘অপেক্ষায় থেকো’ সে শব্দও ফিঁকে হয়।
সে আবেগে শ্যাওলা জমে
সে অপেক্ষার কিছু পথ পথের বাঁকে এসে থেমে যায় কিছু পথ মিশে যায় অন্য পথে।
তিনঃ
সহস্রের অঙ্গুলিতর্জন জীবন ভেদ করে অচপল আঁখিতে উঁকি দিয়েছি যেই শান্ত এক সরবরে
অমনি আমার মন সেজেছে নিজের অবয়ব সাজাতে
তখনই অশান্ত এক মাছরাঙ্গা ডুবসাঁতারে টেনে নিলো তার শীকার
শান্ত সরোবরে নিজের অবয়ব মিলালো ঢেউয়ে ঢেউয়ে।
চারঃ
বর্বর বায়ু দখিনের জানালায় হঠাৎ হঠাৎ উত্তরের হাওয়া ছাড়ে
হিমালয়ের অচলশিখর ভেদ করে আসে যেনো এ হাওয়া
পর্দার চাদরে বিরতিহীন খেলা করে বিস্তীর্ণ জনপদ পেরিয়ে।
টান্ডা হিম আমি কেঁপে যাই গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপেও।
আমি নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে খুঁজে ফিরি একটুখানি উষ্ণতা।
,,,রিতু,,, কুড়িগ্রাম।
২১.৪.১৯.
৩২টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
প্রথম।
রিতু জাহান
💎💎
নীলাঞ্জনা নীলা
দ্বিতীয় 😭😭😭😭
রিতু জাহান
🎶🍨🍨
মনির হোসেন মমি
সুন্দর।দ্বিতীয়।
রিতু জাহান
ধন্যবাদ মনির ভাই
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু প্রথমেই নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
এবারে আসি লেখার কথায়। মনটা বুঝি খুব এলোমেলো? আমার কাছে তাই ই মনে হলো। হয়তো ভুলও হতে পারে। অপেক্ষার মাত্রা আর পার্থক্যের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। যা সাধারণত হয়না। তোমার প্রতিটি লেখাই মনকে ছুঁয়ে যায়।
আরোও একটা এমন লেখা চাই, যেখানে এলোমেলো ভাব থাকবে না। শুধুই প্রশান্ত মন। অনেক ভালো থেকো শান্তসুন্দরী আপু।
রিতু জাহান
তোমাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা আপু। অপেক্ষা আর পার্থক্যে আজীবন একটা দ্বন্দ্ব আছে বৈ কি!
মনটা ঠিকই আছে আপু। ভালো থেকো আপু
রিতু জাহান
নীলাআপু এখন পড়ে দেখো তো
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যাঁ এখন ঠিক আছে আপু।
মাহমুদ আল মেহেদী
ইতিহাস তুমি কেঁদোনা, পরিবর্তন আসে
চির ক্লান্তির ভাবনা, তোমাকেই ভালবাসে
বন্ধু তুমি কেঁদোনা, আমারও কান্না আছে
কাঁদিনা তোমারি জন্য, তুমি ভেসে যাও পাছে…]
লেখাটা পড়ে মনে পড়লো খুব করে…..
রিতু জাহান
বেশ সুন্দর শব্দমালা।
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থকুন সব সময়।
মাহমুদ আল মেহেদী
ফিডব্যাক এর কোন একটা গানের আগে শুরু করা কথাগুলো
ছাইরাছ হেলাল
পড়ে পরে লিখব!!
কেমনে যে এ লেখার উত্তর দিব কে জানে।
আরজু মুক্তা
ছায়া সুনিবিড় গ্রাম,মনকে নাড়িয়ে দেয়!
রিতু জাহান
ওকে গুরুজি। পড়ুন অপেক্ষা
রিতু জাহান
ধন্যবাদ আরজু মুক্তা
বন্যা লিপি
ছুঁয়ে দিয়ে গেলো শুষ্কমনে শিশিরের ফোটার মতো প্রতিটি শব্দের ভাবার্থ। বিষদ ব্যাখ্যায় মন্তব্য করার মতো শব্দ দারিদ্রে ভুগছি ইদানীং।
নিরন্তর ভালোবাসা শুভ কামনা 🌹🌹🌹🌳🌳🌳
রিতু জাহান
অনেক ধন্যবাদ প্রিয়।
তৌহিদ
এত এত লেখকদের লেখার মাঝে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। প্রত্যেকটি পর্বই অপুর্ব কথামালার বিচ্ছুরণ।
কবির কি মন খারাপ নাকি বিক্ষিপ্ত?
শুভকামনা রইলো আপু🌹
রিতু জাহান
আপনি ক্ষুদ্র! যা লিখছেন আজকাল তা অসাধারণই বলব আমি।
না, মন ঠিক আছে ভাই।
তৌহিদ
লজ্জা দিলেন, বড় লেখকদের কাছ থেকে সুনাম কুড়ানো ভাগ্যের ব্যাপার।☺
রিতু জাহান
আপনি আসলেই বেশ ভালো লেখেন তৌহিদ ভাই।
সবখানে সমান বিচরন দেখতে পাচ্ছি আপনার।
ছাইরাছ হেলাল
আবেগের অপেক্ষা, অপেক্ষার আবেগ
আমাদের শুধুই অপেক্ষায় ফেলে রেখে
একাকী হয়ে যায়, একাকী করে-ও দেয়!
আচমকা মিশে যায় অন্য কোন পথে
বুকের পাথরে।
রিতু জাহান
বুকে অপেক্ষা নামক মস্ত এক পাহাড় সমান পাথর বসিয়ে রেখে যায়।
পাথর পড়ে থাকে। গা ঘেষে বয়ে যায় শুধু জলধারা। সৃষ্টি হয় এক নদীর।
ধন্যবাদ গুরুজি।
প্রহেলিকা
অসম্ভব সুন্দর একটি লেখা। অসাধারণ কিছু বাক্য আর শব্দের অতুল সমাহারে লেখাটি জ্বলজ্বল করছে। কোট করলে পুরো লেখাটিই করতে হবে তাতো আর পারছি না। এই যেমন এই লাইনটিঃ
“বর্বর বায়ু দখিনের জানালায় হঠাৎ হঠাৎ উত্তরের হাওয়া ছাড়ে”
যখন কেবল “বায়ু” শব্দটি উচ্চারণ করা হয় তখন আমাদের কল্পনাশক্তি প্রবল হয়ে উঠে। বায়ু যেহেতু বিমুর্ত সেহেতু আমরা তাকে কল্পনা দিয়ে অনুভব করি। কিন্তু লেখক যখন উচ্চারণ করেন “বর্বর বায়ু” তখন এই কল্পনার মাঝেও ভাবনারা দোল খায়। এমন অনেক লাইনে লেখক নিজের দক্ষতার ছাপ রেখে গেছেন।
সার্থক হউক সৃষ্টিগুলো। ভাল থাকবেন।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ। এলোমেলো ভাবনাগুলো পাঠকের কাছে ডানা মেললে বেশ লাগে।
বায়ু কখনো কখনো বর্বর হয় বৈ কি! তাকে সামলানো দায় হয়ে যায়।
শুন্য শুন্যালয়
চমৎকার একটি লেখা। প্রথমটা দিয়েই শুরু করি।
১.হাঁটতে হাঁটতে পথিক যেমন উদ্দেশ্যহীন এলোমেলো ভাবতে থাকে, কবিকেও এখানে সেই রুপে দেখলাম। প্রশ্নের পর প্রশ্ন, পথ, বেদী, অপেক্ষা, প্রতীক্ষা, গাছ অথবা বৃক্ষ, কুয়োর সাথে জমিদারের পিপাসা। সত্যিই তো জমিদার ও নিশ্চয়ই থেকে ছিলো প্রতিটা মুহূর্ত কখন শেষ হবে এ কুয়ো! তুমি সত্যিই ভাবতে পারো অনেক।
২. আবেগ বা আবেগের গভীরতা মাপলে কিন্তু মানুশ আরো বেশী যান্ত্রিক হয়ে যেতো! তাইনা?
৩. শিকার টেনে নিয়ে সমুদ্র নিজের অবয়ব মেলাতে পারে, এমন লাইন কি করে এলো তোমার মাথায় কে জানে!
৪. বর্বর বায়ু, এ যেন সীমান্তে আছড়ে পড়া অদৃশ্য প্রেমিকের প্রেম, হিম তো লাগবেই।
তোমাকে ভালো লেখার রোগে ধরেছে, এ যেন না সারে!
রিতু জাহান
তবু কিছু আবেগ বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে।
জানতে ইচ্ছে করে সত্যিই সেখানে কতোটুকু স্থান করে নিয়েছে।
সত্যিই সেদিন হাঁটতে হাঁটতে এ লাইনটা মনে এসেছিলো।
ভালবাসা নিও। লেখা দাও।
জিসান শা ইকরাম
খুব ভালো একটি পোষ্ট,
নিজের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন, অনুভুতি চলে আসে আমাদের সবারই,
কেউ প্রকাশ করতে পারে, কেউ পারেনা শব্দের অভাবে।
তুমি এসব ভালোই পারো।
আরো লেখো এমন অনুভুতি,
শুভ কামনা।
রিতু জাহান
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার উপস্থাপন
সবগুলো পর্বই দারুণ