
রিক্সা থেকে নেমে মেয়ের হাত ধরে একটু ফাঁকামতো জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম পরের রিক্সায় আসা বোন ভাগ্নী আর ভাতিজার জন্য। ভেতর থেকে স্রোতের মতো মানুষ বের হচ্ছে, কেউ হাসতে হাসতে এর-ওর গায়ে গড়াগড়ি করছে কারো আবার মেজাজ ভীষণ রকম খারাপ দেখলাম। এরই মধ্যে কিছু সাংবাদিক ক্যামেরা নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছিলো। আমি আমার মেয়েটির হাত ধরে সামান্য ভেতরে গিয়ে সিনেমার পোস্টার গুলো দেখতে শুরু করলাম। বাংলা সিনেমা দুটো মুক্তি পেয়েছে, পরান আর দিন দ্যা ডে।
মেয়ের এবং হলের ভিতরের কিছু ছবি তুলছিলাম এরইমধ্যে এক সুহাসীনি সাংবাদিক এসে আমার মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে জানতে চাইলো আম্মু তুমি কি সিনেমা দেখতে এসেছো? মেয়ের উত্তর না পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কী ছবি দেখবেন আপু? বললাম এখনো ঠিক করিনি, আমার সাথে আরও মানুষ আছে, তাদের সাথে কথা বলে দেখি কোনটা দেখা যায়। কিন্তু শেষমেশ আমরা টিকিট পেতে ব্যর্থ হলাম!
সেদিন সনি স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিরিয়াল ধরে টিকিট না পেয়ে ফিরে এসেছি। অপেক্ষা করছি ভীড় আরেকটু কমলে গিয়ে দেখে আসবো। ছবিটি যেহেতু এখনো নিজে দেখিনি তাই ভালোমন্দ প্রকাশ( রিভিউ) করা থেকে বিরত থাকলাম। তবে সিনেমা হলে গিয়ে কিছু কিছু জিনিস আমার খুবই ভালো লেগেছে যার জন্য আজকের এই পোস্ট।
কিছুদিন আগেও যেখানে বাংলা সিনেমা/সিনেমা হলের দর্শক শুনলে চোখের সামনে কিছু কমন দৃশ্য ভেসে বেড়াতো সেই অবস্থার আমুল পরিবর্তন দেখেছি দিন দ্যা ডে’র বেলায়। স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো হলে গিয়ে, কাউন্টারে সামনে দীর্ঘ-লাইন দিয়ে চলতি শো/এডভান্স শো এর জন্য উচ্চমূল্যের টিকিট কেটে দর্শকরা এই মুভিটা দেখছে, দেখার আগ্রহ প্রকাশ করছে। নির্দিষ্ট একটা শ্রেনী বাদ দিলে আপামর মধ্যবিত্ত/নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শকেরা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা ছেড়েই দিয়েছিল, বিশেষ করে এই প্রজন্মের তরুন তরুনীরা হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখার কথা কল্পনায় আনে কিনা সন্দেহ ছিলো। অবাক হয়ে সেইসব হারিয়ে যাওয়া দর্শকদের একটা বিশাল স্রোত দেখেছি সনি স্টার সিনেপ্লেক্সে। উঠতি বয়সী ছেলেপুলে, আধুনিক সাজে সজ্জিত নারী -পুরুষ, তরুণ-তরুণীরা বন্ধুবান্ধবী সমেত সেখানে উপস্থিত। ঝলমলে পোশাক আর নতুন আর্টের মেকাপে সেজেগুজে টিনএজ মেয়েরা গেছে পরিবারের সাথে। কারো কারো সাথে বড় ভাই/বোন/ মা /মামা/চাচা। অনেকে বউ-বাচ্চা নিয়ে গেছে। মোটকথা মানুষের ভিড় এবং তাদের মাঝে সিনেমা দেখার আগ্রহটা ছিল চোখে পড়ার মতো।
দেড় ঘন্টা পর্যবেক্ষণ/আনাতানা শেষে স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে ফেরার পথে যেটা মনে এলো, হল মালিকেরা নানা সময়ে নানাভাবে দর্শকদের হলমুখী করার অনেকানেক চেষ্টা সাধনা করেও যা করতে পারেনি সেই অসাধ্য কাজটি সাধন করেছেন অনন্ত জলিল আর তার বহুল আলোচিত/সমালোচিত দিন দ্য ডে’।
২৩টি মন্তব্য
নার্গিস রশিদ
সিনেমাটি কেমন লাগলো তা জানার অপেক্ষায় থাকলাম। আবার মানুষ সিনেমা হলে যাচ্ছে ভালোই লাগলো জেনে। শুভ কামনা অনেক।
সাবিনা ইয়াসমিন
হ্যা, মানুষ এখন সিনেমা হলে যাচ্ছে। এটা ভালো দেখে ভালো লেগেছে আমারও।
ধন্যবাদ আপু, শুভ কামনা অবিরাম🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
সামান্য সমালোচনা করতেই হয়, একসাথে অনেক হলে মুক্তি পাওয়া এই ছবি মুক্তির আগে অনন্ত জলিল প্রায় সকল ভার্সিটি টুর করেছে। সবাইকে অনুরোধ করেছে দেখার জন্য, এজন্যই এ ভীরটা ছিল। সবার এক ধরনের আগ্রহ থেকেই যাওয়া।
এতো আলোচনা হয়েছে এটি নিয়ে। যার জন্য আমিও দেখেছি। আদতে কাহিনীবিহীন একটা ছবি। একমাত্র মিশাসওদাগরের অভিনয় সাবলীল ছিল। তবে ইদের বাকিদুটো সিনেমা ভালো ছিল। আর এই সিনেমার লোকেশান ও গান ভালো ছিল।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনন্ত জলিল তার টার্গেট পুরো করেছেন যেকোনো প্রক্রিয়ায়, আলোচনা সমালোচনা সহই। বাংলা সিনেমার দর্শকদের হলমুখী করতে পেরেছেন তার চেষ্টা এবং প্রচারের মাধ্যমে । এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ-ই না। যার যত পরিচিতি তার ততই সমালোচনাকারী।
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
ভাল বা মন্দ সে যা ই হোক না কেন দর্শক কিন্তু ছবি দেখছে, এটিকে আমি ভাল দিক বলেই মনে করছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
হ্যা মহারাজ। আমি যা বলতে চেয়েছি আপনি ঠিক তাই ধরেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
লেখা দিন 🙁
খাদিজাতুল কুবরা
যদি দর্শক হলে গিয়ে মুভি দেখার পরিবেশ তৈরি হয় সেটা খুবই ভালো।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি ২০১৭’র পরে হলে যাইনি। কিন্তু সেদিন যাওয়ার পর দেখলাম বর্তমানে সিনেমা হলের পরিবেশ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। পরিবেশ এবং দর্শক শ্রেণী দুটোই ভালো।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
দর্শক যাচ্ছে এতেই খুশি। এটাই ভাল লাগ্লো। ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ ভাইজান।
শুভ কামনা 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
অনন্তই একমাত্র যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম ভারত কিংবা হলিউডি সিনেমার মত টেকনোলজির আধুনিকতা আনেন।সবায় তাকে সাপোর্ট দেয়া উচিত।
সাবিনা ইয়াসমিন
সবাই তাকে সাপোর্ট দিবে না। কারণ সিনেমার গল্প, এক্টিং এগুলো বেশ বড় ভুমিকা রাখে চলচিত্র বোদ্ধাদের কাছে।
তবে এটা ঠিক বিগ বাজেট এবং ব্যতিক্রমী উপস্থাপন এর জন্য বাংলাদেশের সিনেমা জগতে এখন পর্যন্ত এই একজনই আছেন, অনন্ত জলিল।
শুভ কামনা 🌹🌹
বোরহানুল ইসলাম লিটন
এদিক থেকে তো ’দ্য ডে’ দেখছি যথেষ্ট সফল আপু!
মোবাইল ফোন আর টিভি চ্যানেলের ঠেলায়
জনগণ তো সিনেমা দেখা ছেড়েই দিয়েছিলো।
আমাদের থানা শহরের সিনেমা হলগুলো তো চিরতরে বন্ধ।
তবে গতকাল শুনলাম একটা ডিজিটাল হল হয়েছে আর তাতে
চলছে ‘দ্য ডে’ সিনেমাটি।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহা, হ্যা ভাই তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। দিন দ্য ডে’ যেমনই হোক এই ছবি দেখার জন্য মানুষ হলে গেছে, এর সাথে অন্যান্য মুক্তি পাওয়া ছবি গুলোও দেখেছে। যেসব হল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো সেইসব হলের মালিকেরাও নতুন করে আবার হল চালু করার কথা ভাবছে।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা আপনাকেও।
ভালো থাকুন 🌹🌹
নিতাই বাবু
তো যাইহোক, ২০১১ সালে নিজের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখা টোটালি বাদ দিয়েছি। কিন্তু একসময় সিনেমার পোকা ছিলাম। আপনার সিনেমা দেখার আগ্রহ দেখে নিজের সিনেমা দেখার কথা খুবই মনে পড়ে। একসময় দৈনিক পত্রিকায় চোখ রাখতাম, কোন হলে কোন ছবি মুক্তি পায়। যদি দেখতাম এই ছবিটা নারায়ণগঞ্জ মুক্তি না পেয়ে চট্রগ্রাম মুক্তি পেয়েছে। তাহলে সকালে এক বন্ধু নিয়ে চট্রগ্রামের উদ্দেশে রওনা হতাম। সিনেমা দেখে আবার নাইট কোচে নারায়ণগঞ্জ আসতাম। কিন্তু এখন সবই স্মৃতি। বলছিলাম, ‘নিজের কথা’।
তো এই “দ্যা ডে” মুভিটাও দেখা হবে না। আবার দেখা হতেও পারে, যদি ইউটিউবে এই মুভিটা আপলোড করে।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিয়ের পরে হলে গিয়ে ছবি তেমন একটা দেখা হয় না। আমার সর্বশেষ হলে দেখা মুভি দুটো, মনপুরা আর গহীনে শব্দ। সেদিন গিয়েছিলাম টিকিট পাইনি। তবে এখন থেকে পছন্দের ছবি দেখতে হয়তো যাবো কারণ সিনেমা হলের পরিবেশ আমার কাছে ভালো লেগেছে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
সৌবর্ণ বাঁধন
আধুনিক সভ্যতায় হয়ত প্রচারেই প্রসার। তবু বাংলা সিনেমায় দর্শক হুমড়ি খেয়ে দেখতে যাচ্ছে এটা হয়ত পজিটিভ দিক।
সাবিনা ইয়াসমিন
কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে প্রচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বলিউড এর দিকে যদি তাকাই তাদের অনেক বাজে ছবি ব্লকবাস্টার হিট করে শুধু মাত্র প্রচারের কারনে। যদি পেছনে তাকাই, আমাদের দেশে একটা সময়ে টিভি রেডিওতে খবরের কাগজে বিভিন্ন সিনেমার বিজ্ঞাপন প্রচার হতো যা দ্বারা অনেক সিনেমা হিট করতো। কিন্তু অনেকটা সময় ধরে বাংলা সিনেমার প্রচার তেমন ছিলো না বললেই চলে। মুভি প্রচারের ক্ষেত্রে অনন্ত জলিল সবার জন্যেই অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন যা এর আগে আর কাউকেই এমনভাবে করতে দেখা যায়নি। তার ছবি আলোচিত/সমালোচিত হয়েছে কারণ সে ছবিটির প্রচার/ প্রসার বাড়াতে অনেকধাঁপ উপরে ভেবেছে। মোট কথা সে তার টার্গেট পুরো করেছে। দর্শকদের হল পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে তার প্রচারের মাধ্যমে। অবশ্যই ইতিবাচক দিক।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
হালিমা আক্তার
হলে যেয়ে ছবি দেখা হাতে গোনা। তাও আবার বাড়ির কাছের মধুমিতা ও অভিসার হলে। ছোট বেলায় দেখতাম নতুন ছবি মুক্তি পেলে হল গুলোতে প্রচন্ড ভীড় হতো। এখন আর সেই দিন নাই। পরিচ্ছন্ন ছবি তৈরি হলে মধ্যবিত্ত আবার হল মুখী হবে। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
হলে গিয়ে যতটুকু দেখলাম হলের পরিবেশ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো, সুন্দর। ভালো ছবি দেখতে দর্শকেরা হলে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ, শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ দিদার
মুভি দেখার সময় হয়না,
তো অনেককেই বলতে শুনি দিন” খুব গভীর গল্পসুলভ মুভি নয়। আর এ নিয়েই অনেকে নিন্দা কুৎসা ছড়াচ্ছে।আমি বলবো প্রত্যেকটি বিষয়েরই ভালোমন্দ দিক থাকবে, এটার বেলাও তাই হয়েছে হয়তো, তবে এর দৃশ্য, লোকেশন, আর্টিষ্ট কোয়ালিটিসম্পন্ন।এটাতো মানতে হবে।তাহলে আর বাকি থকে গল্ল! এখন বলছি, যারা বসে বসে কুৎসা ছড়াচ্ছে, এটা না করে একটি ভালো গল্প নিয়ে আসো। এতে দেশ দশ সকলেরই মঙ্গল।
কুুৎসায় তো কিছুই মিলে না!
সাবিনা ইয়াসমিন
একজনের কাছে যেটা ভালো আরেকজনের কাছে সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। সবার পছন্দ/রুচি এক নয়। আবার সবাই সিনেমা বুঝে সিনেমা দেখে এমন না, অনেকেই বিনোদন পেতে দেখে। বাংলা সিনেমার দর্শক বাড়ছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর দর্শকেরা হলে গিয়ে ছবি দেখছেন এটা ভালো দিক।
অনেকদিন পর আপনাকে ব্লগে দেখলাম। নিয়মিত আসুন আর লেখা দিন।
ভালো থাকবেন দিদার ভাই। শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ দিদার
নিশ্চয়ই,
আসলে সময় হয়ে উঠছে না,ট্রেন লাইনচ্যুত হলে যেমন হয়,তেমন চলছি।