এক ছেলে তার মাকে চিঠি লিখেছিল “মা আমি ভালো আছি,চাংকু আর পাংকুকে নিয়ে প্রতিদিন কাজে যাই”।তো ছেলেটির মা তার উত্তরে বলেছিল,বাবা তুমি তোমার চাংকু পাংকুকে আমার সালাম দিও।ছেলে চিঠিটি পড়ে হাসছে আর ভাবছে ‘হায়রে বাংলার মা”তুমি এতই অবুঝ তোমার জ্ঞানে।বলাবাহুল্য চাংকু হলো মাটি কাটার কোদাল আর পাংকু হলো সাফাল।এই হলো চাংকু পাংকুর ইতিহাস।সেখানে কাজ দিল, করিনি।১৫ বছর থাকার যখন পারমিশন পেয়েছি তখন আর যেন তেন
আজ শনিবার কালকে রবিবার সিঙ্গাপুর হলিডে।মোস্তফা প্লাজা থেকে টাক্কা পর্যন্ত প্রায় ৫/৬ কিঃমিঃ রবিবারে লোকে লোকারণ্য।শনিবার রাতে ৬/৭টি কাটুন গরু এবং খাসীর মাংস টুকরো করে কাটতে হবে রবিবারে বিক্রয়ের জন্য।প্রতি কাটুনে ৪০ কেজি করে ।শনিবার সন্ধ্যায় একটি কভার ভেনে কাঁচামালের খাচি লাউ,জালি,আলু,পটল ইত্যাদি এবং মাছ মাংস ভরে গাড়ী নিয়ে রওয়ানা হই সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন যায়গায় যেখানে বাঙ্গালী,তামিল,থাইল্যান্ডীরা কাজ করে তাদের কাছে বিক্রয় করতে।তারা সপ্তাহের বাজার এক সাথে করে।সেই কারনে সিঙ্গাপুরে এমন কোন স্হান নেই যেখানে আমি যাইনি কিংবা যাওয়া হয়নি।সিঙ্গাপুরের প্রতিটা রাস্তা আমার অন্তরে ম্যাপের মত ভেসে উঠে।রাত ১টা পর্যন্ত মাছ মাংস কেটে প্রায় প্রতিদিন ৪০/৫০ ডলার রোজগার করি।আবার পরদিন সকালে দোকান খুলে মাছ-মাংস কাটতে শুরু করি।মাছ কাটার নিয়ম আছে একটি টুকরা ছোট বড় হলে বাঙ্গালী কাষ্টমাররা নিবে না।কারন ওরা মেস সিস্টেমে খাবার খায় তাই যদি কারো কাছে ছোট টুকরা পড়ে তবে যিনি বাজার করে তার সাথে ঝগড়া হয়-“কি রে আমি কি পয়সা দেইনা”সুতরাং মাছ মাংসে চাপাটির কোপ হতে হবে সমান সাইজে।এক সময় পুরো সিঙ্গাপুরে মাছ-মাংস সাইজ মত কাটাকাটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।ডিগ্রী পাসধারী হয়ে যাই কসাই আর মাইছ্ছা।রবিবারে দোকানদারী করি আর আপন জন যারা দোকানে আসে তাদের সাথে ভাবের আদান প্রদান করি।এই ভাবে নানা নাটকীয়তায় চলে যায় প্রথম দুটো বছর।
যেহেতু আমি সিঙ্গাপুরে স্কিল পাশ সেহেতু আবার আসতে কেবল মাত্র টিকেটের পয়সাটা লেগেছিল।কাজ পেলাম ডাইরেক্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানী নাইলেক ইলেকট্রিক্যাল।সেখানে ভুকিজ নামক স্হানে কোম্পানীর একটি ইলেকট্রিক্যাল সাইট।রাফেলস হলপিতাল।তার ইলেকটিক্যাল ওয়েরিং এর যাবতীয় কাজ আমাদের কোম্পানীর।এখানে এক একটি পাটিসন শিশা নামক ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে যাতে হাসপাতালে কোন জীবানু ঢুকতে না পারে।প্রতিদিন এক রাত থাকতে হলে রোগীকে গুণতে হয় প্রায় $১২০০ ডলার ।কিছু দিন এই সাইটে কাজ করার পর কোম্পানীর এক ইঞ্জিনিয়ার রোজানো(ফিলিপাইন) আমাকে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাএবং কম্পিউটারের কাজ দেখে স্টোর সহকারী হিসাবে নিয়ে নেন।স্টোর এর ইনচার্য হলো মালেশিয়ান।ভুগিজের সাইটের এবং মেরিনায় সানটেক সিটিতে সুইমিং পুলে লাইট ফিটিং এর অতিরিক্ত দায়ীত্ব পাই।ভুগিজে মাটির নীচ দিয়ে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার পথচারী পারাপার এবং মার্কেট মেরিনা বিচে গিয়ে ঠেকেছে।মাটির নীচে এত সুন্দর পরিবেশে মার্কেট যে মনে হয়না আমি মাটির নীচ দিয়ে হাটছি।এর উপর দিয়ে বয়ে গেছে MRT অথাৎ রেল লাইনের রাস্তা এবং বড় বড় বানিজ্যিক বিল্ডিং।ভুগিজে আছে সিনেমা হল।হলে টিকেট কাটতে হলে পারমিট শো করতে হয়।এক বার আমরা তিন বন্ধু মিলে ছবি দেখতে গিয়ে বোকা বনে গেলাম–চাহাতি সিনেমা হলের নাম ।রিভার ভ্যালীতে অবস্হিত।যথারিথী পারমিট সু করে টিকেক নিয়ে সিনেমা হলের ভিতরে ঢুকলাম ততক্ষনে সিনেমা শুরু হয়ে গিয়েছিল।সিটে বসার সাথে সাথে একটি ঘুড়া চলার শব্দে আবার দাড়িয়ে গেলাম পরক্ষনে বুঝতে পারলাম ডিজিটাল সিনেমার ডিজিটাল সাউন্ড।চারদিকে কেমন যেন অন্ধকার দেখছি।ছবি যখন শেষ ,হলের সমস্ত জ্বলে উঠল আমরা অবাক হয় দাড়িয়ে রইলাম।দলে দলে লোক বাহির হচ্ছে, একটা ছেলে একটা মেয়ে সাড়িবদ্ধ ভাবে বের হচ্ছে বুঝতে আর অসুবিদা হল না যে প্রত্যকে তারা তাদের গার্ল ফেন্ডস কিংবা স্বামী-স্ত্রী।আর দয়া করে কেহ মাইন্ড করবেন না ছবিটা ছিল সদ্য মুক্তি পাওয়া বোম্বের রেখা অভিনীত “কাম সূত্র”।লজ্জায় হল থেকে বের হলাম সবার শেষে।কারন আমরাই একমাত্র সিঙ্গেল আর ওরা জোড়ায় জোড়ায়।
সফলতার সহিত প্রায় এক বছর হলো কাজ করছি।সামনে পারমিট রিনিউ করার সময় এসেছে।একদিন কোম্পানীর সাইট ম্যানেজার স্টোরে এসে দেখে আমি একা। সে প্রশ্ন করে।
-তোমার বস কই,তুমি এখানে কি করো?
-বস একটু বাহিরে গেছে,আর আমি এখানেই কাজ করি।
-কে বলেছে এখানে কাজ করতে?
-রোজানো(ফিলিপাইন ইঞ্জিঃ)।
-ঠিক আছে,তুমি একটু সাইটে যাও সেখানে ৪র্থ তলায় কয়েকটি লাইট জ্বলছে না সে গুলো চেক করে ফিটিং করে এসো।কি পারবেতো?
-জি পারব।চলে গেলাম সাইটে ।কাজ শেষ করে ফিরে এলাম স্টোরে।বসকে বললাম সব ঠিক হয়ে গেছে।বসে আছি স্টোরে।আমি যখন বসের অর্ডার ফলো করতে সাইটে গিয়েছিলাম এর মধ্যে রোজানো ইঞ্জিনিয়ার একবার স্টোরে এসে ঘুড়ে গেছে।আবার এসে আমার সাথে রাগা রাগী করছে।তখনও ম্যানেজার বসা।
-তুমি স্টোর রেখে কোথায় ছিলে?
-বস আমাকে সাইটে পাঠিয়েছিল।
-কেনো?তোমার কোথাও যাওয়া চলবেনা,যেই বসই বলুক আমার কথা বলবে ওকে।
-ওকে বস।
সাইট ম্যানেজার নিজেকে অপমান বোধ করে।চাইনিসে কি যেন দুজনই তর্কে মেতে উঠে।তবে বুঝা গেল রোজানোর কথায় ম্যানেজার খুব রাগ হয়েছে।সেই দুজনের তর্কই আমার সিঙ্গাপুরে থাকা কাল হলো।পারফরম্যান্স থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত পারমিট রিনিউ করেনি।কারন বাঙ্গালীদের ভালমন্দ দেখার ভার সাইট ম্যানেজারের উপর।আমার যখন পারমিট রিনিউ হলোনা তখন ফিলিপাইনের সেই ইঞ্জিনিয়ারও চাকরী হতে নিজ ইচ্ছায় ইস্তফা দেন।পাশপোষ্ট অন্যত্র জমা দিয়ে চলে এলাম প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে।দেশে থাকার ১৫ দিনের মত সময় পেয়েছিলাম আবার অন্য কোম্পানীতে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে।এবারও ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি।
চলবে…
১০টি মন্তব্য
খসড়া
আপনার এই পর্বগুলি আমার খুব প্রিয়। ভাল থাকুন। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
মা মাটি দেশ
অনেক ধন্যবাদ। -{@
নীলকন্ঠ জয়
চলুক…
ভালো লাগছে। -{@
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা। -{@
জিসান শা ইকরাম
পড়ছি আর জানছি দেশের এক সোনার ছেলের প্রবাস জীবন
ভালো থাকুন ভাই আপনি
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।
মা মাটি দেশ
অনেক ধন্যবাদ ।
শুন্য শুন্যালয়
এক নিশ্বাঃসে আপনার লেখাগুলো পড়ে ফেলি, অনেক ভালো লাগা জানুন …পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম …
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ দম না ফেলানোর জন্য।
রিমি রুম্মান
প্রাবাসের বিচিত্র অভিজ্ঞতা… জানছি… পড়ছি ভাললাগা নিয়ে।
মা মাটি দেশ
সাথে থাকার জন্য.. -{@