আমার একটা কালো শার্ট ছিলো । কলারটা ছাই রংয়ের । কালো শার্টের কলার কেন ছাই রংয়ের হলো এটা একটা বিরাট রহস্য । শার্টটা কেনার পর বাড়িতে এসেই আইনস্টাইনকে জিজ্ঞেস করলাম, বলেন তো ব্রাদার কালো শার্টের কলার কেন ছাই রংয়ের ? উনি কোন উত্তর না দিয়ে আগের মতই জিভ বের করে থাকলেন । আমি আগেও খেয়াল করেছি এটা তার একটা ভং । যখন কোন কিছুর উত্তর দিতে পারে না তখন এমন ভেংচি কেটে ভং ধরে । সেদিনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই রহস্যের সমাধান আমি বের করবই । রহস্যের সমাধান বের হলেই আমার একটা স্বপ্ন পূরন হবে । অনেকগুলো গোপন স্বপ্ন আছে আমার । সবারই অবশ্য থাকে । আমারটা একটু ভিন্ন । আইনস্টাইন ব্যাটাকে একদিন দেখিয়ে দিতে চাই, তারচেয়ে আমি এক আঙ্গুলও কম না । আমিও চিন্তা করতে পারি । একেবারে ছোটখাট জিনিস নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝিম মেরে চিন্তা করতে ভালো লাগে । চিন্তা করতে করতে ঘুমাতে ভালো লাগে । ঘুমের ঘোরে চিন্তাগুলো সবথেকে ফ্রেশ হয় । টয়লেটে বসে চিন্তা করার থেকেও ত্রুটিমুক্ত চিন্তা করা যায় একমাত্র ঘুমের মাঝেই ।
চিন্তা করা ছাড়াও আমার আরেকটা প্রিয় কাজ আছে । মানুষ দেখা । আমার মানুষ দেখতে ভালো লাগে । যখন চিন্তা করার কিছু খুজে পাইনা তখন হেটে হেটে আমি মানুষ দেখি । প্রত্যেক্টা মানুষের চোখ নাক কপালে হাজার হাজার গল্প লেখা থাকে । সবাই সে লেখা পরতে পারে না । আমিও পারি না । তাই মানুষ দেখে গল্প বানাই । প্রতিটা মানুষের গল্প আলাদা আলাদা ভাবে একরকম হয়ে যায় । আমার বানানো গল্প গুলো কেন জানি অসমাপ্ত হয় । অনেকটা আমার জীবনের মত । প্রতিটা মানুষ এক একটি অসমাপ্ত গল্পের মাঝে বেড়ে ওঠে, প্রেম করে, দুঃখ পায়, তারপর মরে যায় । গল্পের শেষ হয় না । গল্পটা অসমাপ্ত থেকেই যায় । আমার অনেকদিনের ইচ্ছে, আমার সব গল্পগুলো একদিন সমাপ্ত হবে । পরিবাগের মোড়ে যে পাগলটা চিৎকার করে গালাগালি করে তার সাথে মিলে যাবে সিটি কলেজের নাম না জানা সেই মেয়েটার গল্প, যার চিবুকের নিচের কাটা দাগটা দেখে আমি তাকে জোবাইদা ডেকেছিলাম । একি সাথে মিলে যাবে আমাদের টুনির মায়ের গল্পটাও । টুনির মায়ের গর্ভে এখন কার সন্তান সেটাও হয়তো জানা যাবে একদিন । গল্পে টুনির একটা বিয়েও দিয়ে দেব । তার তিনটা বাচ্চা হবে, দুইটা ডোরাকাটা, একটা কালো । কালো বাচ্চাটার নাম দেব মিনি । মিনি কি আরেকটা নতুন গল্পের শুরু করবে ? জানি না । আমার জানতে ইচ্ছে করে না । গল্প বানাতে বানাতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি । এতোটা ক্লান্তি আমার উপর কবে থেকে ভর করেছে ? হয়তো প্রতিটা অসমাপ্ত গল্পের নায়ক নায়িকারা রোজ আমাকে অভিশাপ দেয় । এরকম হাজারো অভিশাপে আমি অভিশপ্ত হয়ে আছি অনেকদিন ধরে ।
আমি অবশ্য ঠিক জানি, অনেক দিন আগে আমি এমন অভিশপ্ত ছিলাম না । আমার স্পষ্ট মনে আছে, অনেকদিন খুব ভোরে একা একা হাটার সময় একটা পাখি আমাকে ডেকে বলেছিলো আমি একদিন অনেক বড় হবো । গাছের সমান । তখন আমার গাছ হওয়ার সাধ জেগেছিলো । আমি রোজ রোজ গাছেদের কাছে গিয়ে বলতাম, আমাকে নিয়ে নাও । আমি সব ছেড়ে তুমি হবো, তোমার হবো । ফলবতী গাছটা একটা পাখিকে ভালোবাসতো । হঠাত করেই তাই আমি পাখি হয়ে যেতে চেয়েছিলাম । কিন্তু পারি নি । পারিনি বলেই আমি অভিশপ্ত হলাম । কি অবাক ব্যাপার ? অভিশপ্ত হওয়ার পর আমি এখন সব হতে পারি । কখনো পাখি, কখনো গাছ । কিন্তু সেই পাখি আর সেই গাছটার কথা আমি দিব্যি ভুলে ছিলাম । একদিন হঠাত খবর পেলাম পাখিটাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, গাছটাকে এখন একটা পিপড়া ভালোবাসে । পিপড়াটার বিশাল একটা দল আছে । আমি চুপচাপ সেই দলে ভিড়ে গিয়েছিলাম । পিপড়া জীবন আমার সুখের হয় নি । পিপড়া গুলো সারাদিন খাটে । চিন্তা করার সময় তাদের কই । তাই একদিন ফিরে এলাম । যেখান থেকে আমার অভিশপ্ত জীবনের শুরু ঠিক সেখানে । এখানে এখন অনেক মাছির বাস । মাছিরা আমকে বন্ধু বানিয়ে ফেললো । অথচ আমি অভিশপ্ত ছিলাম । তারা সারাক্ষন আমাকে গান শোনায় । গানের তালে তালে আমি ঝিমায় । ঝিমুতে ঝিমুতে চিন্তা করি । চিন্তা গুলো এখন অনেকটা স্বপ্নের মত মনে হয় । অভিশপ্ত হওয়ার আগে যেমন স্বপ্ন দেখতাম ঠিক সেরকম কিছু স্বপ্ন আমাকে রোজ খাইয়ে পড়িয়ে বাচিয়ে রাখে । মাঝে মাঝে স্বপ্নে সেই কালো শার্টটা আসে । আমাকে ডেকে বলে রহস্যের সমাধান করো । একদিন তোমাকে আইন্সটাইন হতে হবে । আমি ঝিমুনি ভাঙ্গার পর জেগে উঠে কালো শার্টটা খুজতে থাকি । কিছুদুরে মাছিরা আমার কালো শার্টটা ঘিরে নৃত্য করে । সেই শার্ট পড়ে কেউ একজন ঝুলে থাকে সিলিং্যের সাথে । কিছুদিন আগেও শার্টটা আমার ছিলো । মাত্র কিছুদিন আগে ঝুলে থাকা সেই লাশটাও আমি ছিলাম ।
৩০টি মন্তব্য
স্বপ্ন
কোথার গল্প কোথায় গিয়ে সমাপ্ত হয়।পড়তে কিন্তু বেশ লাগলো।স্বপ্ন পুরন না হওয়ায় কি ঝুলে গিয়ে লাশ হলো?আমি স্বপ্ন আমি লাশ হবো না নিজের ইচ্ছেয় কোনদিন।
রাইসুল জজ্
স্বপ্ন পুরণ না হওয়ায় কেউ লাশ হয় না । স্বপ্ন দেখায় ক্লান্তি এসে গেলে লাশ হয়
প্রজন্ম ৭১
একেই তাহলে অনুগল্প বলে 🙂 আপনি বেশ ভালো লিখতে পারেন।আমাদের বঞ্চিত করছেন কেন কম কম্ লিখে ?
রাইসুল জজ্
বেশি বেশি লিখতে পারি না । সব গোলমেলে হয়ে যায় । আমি খুব অনিয়মিত মানুষ । নিয়ম করে অনিয়ম করার স্বভাব আমার রক্তে মিশে আছে । ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য 🙂
অলিভার
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম আপনার লেখাটি। ঠিক শেষে পৌঁছোবার আগ পর্যন্ত প্রতিবার ভাবনা কে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছেন, এই জিনিষটা চোখে পড়ার মত। যদিও শেষটায় এসে মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু তারপর মনে হচ্ছে এইরকম কিছু না হলে হয়তো এই লেখাটা পূর্ণতা পেতো না।
আশা করছি দ্রুতই নতুন অনুগল্প নিয়ে আসবেন আমাদের জন্যে 🙂
শুভ কামনা রইলো -{@
রাইসুল জজ্
ঘোরের মধ্যে লিখেছি । ঠিক বুঝতে পারি নাই কি লিখছি আর কি লিখতে চেয়েছি । এই কারনে দেখবেন তিনটা অংশ তিন রকম । ধন্যবাদ পড়ার জন্য । চেষ্টা করবো নতুন কিছু লেখার । তবে আমি অনিয়মিত মানুষ । সহজে নিয়ম করে কিছু করতে পারি না । 🙂
শুন্য শুন্যালয়
অসমাপ্ত গল্পের নায়ক নায়িকারা অভিশাপ দেয়, দারুন ভাবনা। গল্পটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলেছি। অনেক সুন্দর।
কিছুদিন আগে এরকম একটা মুভি দেখেছিলাম “চতুষ্কোণ”। গল্পের চরিত্ররা একদিন সবাই মিলে লেখক কে মেরে ফেলে।
এমন গল্প আরো আরো চাই।
কৃন্তনিকা
ভালো কাজ করলেন না, আপু। আমি চতুষ্কোণ দেখতে চেয়েছিলাম 🙁
Spoiler… ;(
রাইসুল জজ্
চলেন উনাকে জরিমানা করি ।
শুন্য শুন্যালয়
না না, গল্পের কিছুই বলিনি। এই মুভিতে শেষ পর্যন্ত গল্পের ছড়াছড়ি। কান্নাকাটি বাদ দিয়ে দেখে ফেলুন জলদি। 🙂
রাইসুল জজ্
🙂 🙂 🙂 আমি কোন কিছুই সময় মত করি না । যখন সবার দেখা শেষ হয়ে যাবে তখন দেখবো । 🙂
রাইসুল জজ্
আমিও দেখি নাই । শুধু গান শুনেছি । তবে এটাতে কেউ খুন করে নি । অভিশপ্ত মানুষদের নিয়ে কারো আগ্রহ থাকে না ।
শুন্য শুন্যালয়
হুম এটাতে খুন করেনি কেউ, শুধু ভাবনার এক ছটা মিল পেয়েছি। আপনার গল্পটা পড়ে এটাই ভেবেছি যে এতো দারুন গল্প গুলো আমরাই কোন বৃহৎ কাজে লাগাতে পারলাম না।
সত্যিই অসাধারন গল্প।
রাইসুল জজ্
বৃহৎ কাজে মানে কি ? আপনি কি সিনেমা বানানোর কথা বলছেন ? তাহলে বলবো, যা পড়তে ভালো লাগে তা পড়ায় ভালো । সিনেমার জন্য অন্য রকম ভাবে লিখতে হয় ।
জিসান শা ইকরাম
গল্পের বুনন এবং কাহিনী যথেষ্ঠ ভালো হয়েছে।
রাইসুল জজ্
অনেক ধন্যবাদ জেস দা পড়ে দেখার জন্য 🙂
কৃন্তনিকা
অনেক ভালো লাগলো… (y)
শেষে এসে চমকে গেলাম… বিষণ্ণ হয়ে গেলাম…
রাইসুল জজ্
লেখাটা শেষ করার পর আমিও চমকে গেছি । এটা আমি কি করলাম । আমারো খারাপ লেগেছে কিছু টা । কিন্তু করার কিছু ছিলো না ।
আশা জাগানিয়া
অনুগল্পই তো ভালো।বড় গল্প লেখার কি দরকার এমন চমৎকার অনুগল্প হলে।
রাইসুল জজ্
আমি বড় গল্প লিখতে পারি না । আমার দম্বন্ধ হয়ে যায় । অস্থির মানুষ তো তাই । সাথে আলসেমিও লাগে
স্বপ্ন নীলা
সুন্দর আর সাবলীল — সাভাবিক মৃত্যুই কাম্য, তবে আপনার লেখা সত্যি অসাধারণ
রাইসুল জজ্
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য । যা কাম্য তা কি সব সময় হয় ? আমরা যা চাই তা কি পাই সব সময় ? পাই না । মানুষ অসহায়, খুব অসহায় প্রাণী ।
ব্লগার সজীব
অনেক ভালো একটি গল্প পড়লাম।ধন্যবাদ আপনাকে।
রাইসুল জজ্
আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য 🙂 🙂 🙂
ইমন
অসাধারন ভাই।
রাইসুল জজ্
ধন্যবাদ ভাইয়া । হ্যাপি ব্লগিং ।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো একটি গল্প পড়লাম।
রাইসুল জজ্
ভালো বলছেন ? হবে হয়তো । হঠাত করে লিখে ফেলা কিছু আবোল তাবোল ভাবনা । ধন্যবাদ আপু । 🙂 🙂 🙂
খেয়ালী মেয়ে
গল্প পড়তে পড়তে নিজেকে এক ধরনের মুগ্ধতার মাঝে আবিষ্কার করলাম–কি সুন্দর করে লিখেছেন, প্রতিটা মানুষ এক একটি অসমাপ্ত গল্পের মাঝে বেড়ে ওঠে (y)
শেষ লাইনটা হৃদয়কে ছুঁয়েছে, মাত্র কিছুদিন আগে ঝুলে থাকা সেই লাশটাও আমি ছিলাম -{@
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো–আরো বেশী বেশী লেখা পোস্ট করুন…
রাইসুল জজ্
আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে আমার এইসব ছাইপাশ লেখা পড়ার জন্য । হ্যাপি ব্লগিং । 🙂 🙂