অংশবিশেষ ভালোবাসার গল্প

রিমি রুম্মান ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, মঙ্গলবার, ১১:০৫:৩৩পূর্বাহ্ন বিবিধ ১২ মন্তব্য

অংশবিশেষ ভালোবাসার গল্প February 10, 2014 at 11:58pm
যেদিন সকালে তাদের প্রথম দেখা, সেদিন মেয়েটি ভীষণ লাজুক লাজুক হালকা গোলাপি রং ধারন করেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠা যে কোন মানুষের মতই চোখে মুখে এক পবিত্রতা বিরাজ করছিল। কোনরকম মেকআপ কিংবা সাজগোজ ছাড়াই অপূর্ব লাগছিল তাকে। কফিশপের এক কর্নারের টেবিলে বসেছিল তারা দু’জন মুখোমুখি। চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রাতুল জিজ্ঞেস করেছিল, “তুমি কি সব সময়ই কথা কম বল, নাকি আমার সাথেই মেপে মেপে বলছ?” চা’য়ের কাপ থেকে চোখ জোড়া ফিরলো রাতুলের মুখ পানে। সেই মাপা মাপা লাজুক হাসি। শব্দহীন। চুপচাপ থেকেও যে অনেক কিছু বলা যায়, রাতুল এই প্রথম জানলো। কেননা, মেয়েটির সেই হাসি অনেক অর্থ বহন করছিল। রাতুল তাকালো মেয়েটির বাদামী মায়াময় চোখের দিকে। মেয়েটি চোখ সরিয়ে নিলো বাইরে দূরের সরু রাস্তার দিকে।

ওদের কথা হয়েছিল ফেসবুকে। রাতুল এড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে ঠিকই, তবে সেই সাথে সুন্দর একটি ম্যাসেজও লিখেছিল… যা মেয়েটিকে আকৃষ্ট করেছিল এবং প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। তাদের কথা হতো টুকটাক। তবে মেয়েটি খুব বেশি কথা বলতে চাইতো না। যদিও মনে মনে তা ছিল না। কিন্তু রাতুল তার বিপরীত। সে অনর্গল কথা বলে যায়। যা কিছু তার স্বভাবে বিরাজ করে, তা কিছুই তার চোখেমুখে ফুটে উঠে। কোনকিছুই মনের গহীনে চেপে রাখতে পারেনা।

বয়সে মেয়েটি রাতুলের চেয়ে দুই বছরের ছোট যদিও, কিন্তু আচরনে অনেক বেশি ধীর স্থির এবং পরিনত। যেন শান্ত শুভ্র আকাশ, কেবল প্রয়োজনেই বৃষ্টি ঝরাবে, অপ্রয়োজনে টিপটিপ করেও ঝরতে রাজী নয়। এই স্বভাবটি পেয়েছে মেয়েটি তার মায়ের কাছ হতে। বলা যায় জেনেটিক প্রভাব। মেয়েটির বাবা নেই। মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে তিনজনের পরিবার তাদের। বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন শিক্ষিতা পরিশ্রমী মা। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মা, মেয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি কখনো। তাই বলে প্রাপ্ত স্বাধীনতা উপভোগের নামে মেয়েটি যা খুশি তা করেনা। মা’কে খুব বুঝে সে। বাবার অভাব বোধ তার এতোটুকু জীবনকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। একাকি হলেই এই শূন্যতা তাকে করে রাখে বেদনাক্লিষ্ট। তবে তার এই বেদনা অপ্রকাশিত।

রাতুল যখন হাই, হ্যালো বলতো ফেসবুকে, মেয়েটি প্রতিউত্তরে শুধু হুম, হ্যাঁ করতো। যেচে কথা বলতো না। তবে এটা সত্যি যে, সে কথা বলতে চাইতো প্রানখুলে। দ্বৈত স্বত্বা তার মাঝে বিরাজিত। মনে মনে অনেক কথা বললেও প্রকাশ্যে নীরবতাই তার চারত্রিক বৈশিষ্ট্য। মেয়েটির নাম “নিরবতা”। প্রথম

প্রথমদিকে রাতুল বলতো, “নিরবতা যদি মাঝে মাঝে একটু সরব হতো, খুব ভাল লাগতো”। সেইসে
সেই থেকে তাদের অল্প অল্প কথা বলা শুরু।রাতুলের সহজ সরল কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে যায় নিরবতা। রাতুল মুগ্ধ হয় নিরবতার নিরবতায়। মুগ্ধ হয় স্বল্পভাষী নিরবতা’র কালে-ভদ্রে প্রয়োজনে কথা বলার স্বভাবে। যদিও মনে মনে খুব আশা করে, তাকে ভালোবাসার কথা বলুক, খলবলিয়ে দুঃখসুখের কথা বলুক, প্রকাশ করুক সব অনুভূতিগুলো।

কফিশপে প্রথম দেখার দিনই নিরবতা প্রকাশ করেছিল তার অনুভূতির কিয়দংশ এভাবে___” মা’য়ের জন্য কষ্ট হয় অনেক। মা অনেক অল্প বয়সে বিধবা হয়েছিল যদিও, কিন্তু আমাদের দুই ভাইবোনের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য চিন্তা করেনি। মা’য়ের ধারনা ছিল, অন্য একজন মানুষ যদি মা’য়ের জীবনে আসে, সে আমাদের বাবা’র মত করে ভালবাসবে না। পৃথিবীতে একজন বাবা’র স্থান অন্য পুরুষ দিয়ে পূরণ হয় কি? পৃথিবীতে কারো বিকল্প কেউ হতে পারে না। পারে কি? যদিও আমার নানার বাড়ীর সবাই চেয়েছিল মা’কে অন্যত্র বিয়ে দিতে, আর আমাদের দুই ভাইবনের দায়িত্ব তারাই নিয়ে নিতে। কিন্তু সন্তানদের দূরে রেখে কোন মা-ই সুখে থাকে কি? সেই থেকে আমার মা জাগতিক পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলানো ছেড়ে দিয়েছে। শুধু আমাদের মানুষ করার দিকে মনোযোগী হয়েছে। মা-ই এখন আমাদের মা এবং বাবার ভূমিকা পালন করছে।”____রাতুল দেখলো নিরবতা খানিকটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়েছে, কথা বলতে বলতে। মনে হল সে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। কিন্তু না,নিরবতা কাঁদেনি। নিজেকে সামলে নিয়েছে ভালোভাবেই।

রাতুল ভাবে, কি অদ্ভুত মেয়েটি। অন্য সব মেয়েদের মত নয়। আবেগী হয়ে কেঁদে ফেলে না। অন্যের সামনে চোখের জল না ফেলাটাও যেন এক অদ্ভুত মোহনীয় ব্যক্তিত্ব। কোন বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ কিংবা অস্থির প্রকৃতি তার মাঝে অনুপস্থিত। পরিবেশ খানিকটা স্তব্দ হয়ে এলেও কেমন করে আবার একে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আন্‌তে হয়, সেটা মেয়েটি খুব ভালই জানে। এমন কাউকে পেলে যে কোন ছেলেই হ্যাপি হবে, নিশ্চিত__ রাতুল ভাবে। নিরবতা হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। ইতস্তত করে। উঠে যাবার কথা ভাবে। কিন্তু এই বৃষ্টিতে কেমন করে বাড়ি ফিরবে ? নাকি বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করবে__ ভাবে। রাতুল বুঝতে পারে। কফিশপের পরিচিত ছেলেটির কাছ হতে ছাতা চেয়ে নেয়, নিরবতাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে বলে।

এই প্রথম তারা এক ছাতার নিচে খুব পাশাপাশি হাঁটছে। দু’জন দু’জনার স্পর্শ পাচ্ছে কখনো সখনো। আচ্‌মকা যখন তুমুল বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছিলো, বৃষ্টিতে ভিজে যাবে বলে রাতুল নিরবতাকে আঁকড়ে ধরেছে নিজের বাহুতে। যেন নিরবতা তারই অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের অংশবিশেষ। নিরবতা বিব্রত হয়েছে কিনা বুঝা যায়নি যদিও, তবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টাও করেনি সে। সেই বৃষ্টিভেজা আঁধারে ছেয়ে থাকা ধরণীতে তারা দু’জনই সেদিন নতুনভাবে আবিস্কার করে যে, তারা দু’জন দু’জনকে ভালবাসে প্রবলভাবে।

***ভালোবাসার জয় হোক পৃথিবী জুড়ে। প্রিয়জনকে ভালোবাসুন প্রবলভাবে। আসছে ভালোবাসা দিবসে সব কপোত-কপোতী’দের জন্য রইলো আগাম শুভকামনা।  (3 (3 (3

৪৮৪জন ৪৮৪জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ